বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১ pdf, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এসাইনমেন্ট সংক্ষেপে
প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিন। আমরা এই ব্লগে জানবো বাংলাদেশ নামক দেশটির অভ্যুত্থান কীভাবে হয়েছিল, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের ইতিহাস, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সর্বোপরি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। প্রবন্ধটি উপস্থাপন করছি আমি- ময়নুল ইসলাম শাহ্।
ভৌগোলিকভাবে এ দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এর ইতিহাস অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ, এবং অর্জনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। বাংলা সভ্যতা হাজার বছরেরও বেশি পুরনো, এবং এ দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গঠন প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগে প্রবাহিত হয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
আমাদের দেশটি একটি নদীমাতৃক দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর বয়ে চলা এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতিকে গড়ে তুলেছে। উর্বর পলিমাটি এবং অনুকূল জলবায়ুর কারণে এ দেশটি প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি ও বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বাংলাদেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস
শুরুর দিকে গঙ্গারিডি নামক একটি সভ্যতা এ অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছিল। মাউর্য, গুপ্ত, এবং পাল সাম্রাজ্যের শাসন এ অঞ্চলের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাল সাম্রাজ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারের একটি প্রধান কেন্দ্র, যা আজও বাংলাদেশের ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে সোমপুর বিহার এবং পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।
বাংলাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস
মধ্যযুগে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হয়। ১২০৪ সালে তুর্কি শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজির হাত ধরে বাংলা স্বাধীন সুলতানাতের যাত্রা শুরু হয়। পরে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন এ অঞ্চলে শিল্প, স্থাপত্য এবং বাণিজ্যের বিকাশ ঘটায়। মুঘলদের সময়ে ঢাকাকে বাংলার রাজধানী করা হয়, যা পরবর্তীতে বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
মুঘল শাসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি
এ শাসনামলে বাংলায় স্থাপত্যশিল্পের বড় অগ্রগতি ঘটে। লালবাগ কেল্লা, শায়েস্তা খাঁর শাসনামলে গড়ে ওঠা বিশালাকার মসজিদ এবং সোনারগাঁর মতো স্থানগুলো এই সময়ের সাক্ষ্যবহন করে। বাণিজ্যের প্রসারে বাংলার মসলিন সারা পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন করে।
বাংলাদেশের ঔপনিবেশিক শাসনের ইতিহাস
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসনের সময় বাংলার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে একই সাথে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ এ অঞ্চলের মানুষকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ জানাতে উদ্বুদ্ধ করে। ১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অংশ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস
ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলোর একটি হলো ভাষা আন্দোলন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঙালিরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে, যা culminates হয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এদিনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেক মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। এই ত্যাগের ফলে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানএর ইতিহাস
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে একটি মাইলফলক। তৎকালীন আইয়ুব সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে একটি ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলন গণমানুষের সমর্থন লাভ করে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের ইতিহাস
১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যেখানে সাধারণ জনগণের ভোটের মাধ্যমে একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে, পূর্ব পাকিস্তানে overwhelming সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তারা ১৬২টি আসন পেয়ে এককভাবে জাতীয় পরিষদে ক্ষমতা লাভ করে, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি বড় পরিবর্তন সূচিত করে। তবে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা এই ফলাফল মেনে নিতে ব্যর্থ হয় এবং ক্ষমতার হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়, যা অবশেষে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। এর প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” চালিয়ে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে। এর পর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
মুক্তিযুদ্ধের নারীর ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, এবং নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণহানি এবং দুই লাখ নারীর আত্মত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। নারীদের অবদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তার অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজব্যবস্থায় অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করে। এরপর সামরিক শাসন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে এগোয়।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন
বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করেছে। তৈরি পোশাক শিল্প, রেমিট্যান্স, এবং কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলো দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। বাংলা সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য এবং চলচ্চিত্র এ দেশের মানুষের জীবনধারার সাথে গভীরভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামের মতো ব্যক্তিত্বরা বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
উপসংহার
বাংলাদেশের ইতিহাস সংগ্রাম, সাফল্য এবং আত্মত্যাগের এক অম্ল-মধুর ধারা। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এই জাতি তার সংস্কৃতি, ভাষা, এবং স্বকীয়তার জন্য লড়াই করে এসেছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করে বৈশ্বিক অঙ্গনে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইতিহাসের এই গৌরবগাথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই ২৪ বছরের ইতিহাসই হলো বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহই হলো স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস।