প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিন। আমি ময়নুল ইসলাম শাহ্, আপনাদের জন্য তারুণ্যের শক্তি, সাহস, ও মানবিকতার প্রতি উৎসর্গীকৃত তিনটি কবিতা এই ব্লগে লিখেছি। প্রথম কবিতায় তারুণ্যের স্নিগ্ধ ও নির্মল শক্তি তুলে ধরা হয়েছে, দ্বিতীয় কবিতায় তারুণ্যের ঝঞ্ঝা ও অগ্নিগান প্রকাশিত হয়েছে, এবং তৃতীয় কবিতায় তারুণ্যের মমতা, সাহস ও আত্মত্যাগের মহিমা কাব্যিকভাবে রূপ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এই কবিতাগুলো যেকোনো নবীন-বরণ অনুষ্ঠানে আবৃতি করা যাবে যা তারুণ্যের অদম্য শক্তির প্রেরণা যোগাবে।
১. কবিতার নামঃ নবীন প্রভাত ।। লিখেছেনঃ ময়নুল ইসলাম শাহ্
এসো তরুণ, এসো নবীন,
তোমার হাতেই সম্ভাবনার আগামী দিন।
আলো জ্বালো, পথ দেখাও,
তোমার প্রাণে সুরের তরঙ্গ তুলে দাও।
তোমার বুকে যে স্বপ্নের দোলা,
তোমার চোখে যে আলোর খেলা।
তোমার কণ্ঠে যে নব সুর,
মুক্তির গানে উঠুক জেগে সকাল-দুপুর।
তোমার হৃদয় সাহসের আধার,
তোমার কাঁধে কর্তব্যের ভার।
জীবনের পথে তোমার চলার ছন্দ,
পৃথিবীতে আজ মানব-উন্মেষ-আনন্দ।
আনো নতুন দিন, জাগাও নতুন আশা,
সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়াও ভালোবাসা।
তোমার দীপ্তি তৃষ্ণার্ত মনকে করুক পূর্ণ,
তোমার হাসি দুঃখকে করুক চূর্ণ।
তুমি যে তরুণ, তুমি নবীন,
তোমার মুখে ফুটবে বাণী, কাঁপবে বেদ্বীন।
তোমার হাতের ছোঁয়ায় সজীব হবে বিশ্ব
তোমার হাতে সৃষ্টি হবে মহাবিপ্লবের দৃশ্য।
২. কবিতার নামঃ তারুণ্যের জয়গান ।। লিখেছেনঃ ময়নুল ইসলাম শাহ্
তুমি যে নবীন, তুমি যে বজ্রের গান,
তোমার রক্তে জাগে বিদ্রোহের প্রাণ।
তোমার কণ্ঠে বাজুক মহা অগ্নিবাণ,
তোমার বুকে জ্বালাও নতুন আলোর নিশান।
হে তরুণ, তোমার পথে ঝঞ্ঝার ঘূর্ণি-বাঁধা,
তোমার প্রতিবাদে কাঁপে অন্যায়ের অট্টালিকা।
তুমি যে আগুন, তুমি যে সূর্য,
তোমার চোখে নব দিগন্তের জয়-তূর্য।
তোমার তলোয়ারে রণে বিদ্রোহের ঝংকার,
তোমার শপথে মুক্তির সুরে বাজে ডংকার।
তোমার হাতে রইলো আগামী দিনের রথ,
তোমার শপথে সৃজিত হোক মানবতার পথ।
তোমার শক্তি যে বিরাট স্রোতধারা,
নবীন আনন্দে ওঠে জেগে চাদ-তারা।
তুমি যে সিংহ, তুমি যে শঙ্খের ধ্বনি,
তোমার গানে বাজে বাঙলার স্বাধীন বাণী।
তোমার নবীন হাসি সাগরকে দেয় দোলা,
তোমার আলোয় জাগে তিমির-বিদারী বেলা।
তুমি নব দিগন্ত, তুমি নতুন আশা,
তোমার চলায় থাকুক মানবিকতার ভাষা।
৩. যৌবনের কবিতা (কাজী নজরুল ইসলামের ‘যৌবনের গান’ প্রবন্ধ অনুসরণে) ।। লিখেছেনঃ ময়নুল ইসলাম শাহ্
তরুণ নামের জয়-মুকুট শুধু তাহার,
যাহার বুকে জাগে অগ্নি—প্রখর দুরন্ত দ্বার।
গতি-বেগ ঝঞ্ঝার মতো, সাহসে অনির্বাণ,
তেজ যাহার নির্মেঘ আলো, আকাশসম প্রাণ।
বিপুল আশা হৃদয় তার, অফুরন্ত উৎসাহ,
অটল সাধনার স্রোত জাগায় মহাকাল-সমারোহ।
মৃত্যু যাহার হাতে বাঁধা, ভয়হীন পথিক,
তাহার যাত্রায় পৃথিবী খুঁজে নিত্য নশ্বর দিক।
তারুণ্য জেগেছে আরবের মরু-বেদুঈনে,
মহাসমরের সৈনিকদল ত্যাগের শিখরে।
কালাপাহাড়ের অসি ধরে বজ্রের দোলা,
কামাল-করিম-লেনিন সৃষ্টির নব ধারা।
যৌবন খুঁজেছি বৈমানিকের সীমাহীন যাত্রায়,
তারা আকাশ ছুঁতে চেয়েও অমর গাথা গায়।
আবিষ্কারকের নব স্বপ্নে পৃথিবী পায় আলো,
তাদের নিঃস্বার্থ মৃত্যুতে আজ শ্রদ্ধা-প্রদীপ জালো।
কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারে যারা প্রাণ বিসর্জন দেয়,
অতল সমুদ্রের নীল মণি আহরণে প্রাণ হারায়।
মঙ্গলে যারা চিরতরে খুঁজে নেয় ভবিষ্যতের পথ,
তাদের যৌবনে ফুটে ওঠে অমর জীবনের শপথ।
যৌবনের মাতৃরূপ সেবা ও সহিষ্ণুতার ছবি আঁকে,
দুঃখীর পাশে চির-তরুণেরা স্নেহের পরশ মাখে।
অনাহারে থাকা বন্যার্তদের খাদ্য-পাণিয়-পরিত্রাণ,
রোগীর পাশে জেগে তোলে শান্তির সমাধান।
তারুণ্য দাঁড়ায় দুর্বলের পাশে, হাত রাখে হাতে
আশার প্রদীপ জ্বালায় হতাশার কালো রাতে।
রঙ ছড়ায় জীবনের প্রতিটি আঙ্গিনায়,
তরুণের সাথে এ বিশ্ব বিজয়ের গান গেয়ে যায়।