সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষকগণ, এবং প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীগণ,
শুভ সকাল। আজ ২৩ শে জানুয়ারি, ভারতের গর্বিত ইতিহাসের এক বিশেষ দিন। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয় নেতা, এবং চিরকালীন অনুপ্রেরণার উৎস, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমরা তাঁর জীবনের ইতিহাস, অবদান, এবং আমাদের উপর তাঁর শিক্ষার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি, এটি আপনাদের অনুপ্রাণিত করবে।

নেতাজি দিবসের ইতিহাস

২৩ শে জানুয়ারি দিনটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন হিসেবে পরিচিত। ১৮৯৭ সালের এই দিনে তিনি ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন একজন সফল আইনজীবী এবং মা প্রভাবতী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী। শৈশব থেকেই সুভাষ ছিলেন মেধাবী এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে বিদেশি সরকারের অধীনে কাজ করা তাঁর আদর্শের বিরুদ্ধে ছিল। তিনি সেই চাকরি ত্যাগ করেন এবং নিজেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য উৎসর্গ করেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে তাঁর বিপ্লবী মনোভাব এবং মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে নিজের দল “ফরওয়ার্ড ব্লক” প্রতিষ্ঠা করেন।

২৩ জানুয়ারি দিবসের গুরুত্ব

নেতাজি দিবস শুধুমাত্র একটি জন্মদিন নয়; এটি আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের ঐতিহাসিক অবদানের প্রতীক।

  1. দেশপ্রেমের উদাহরণ: নেতাজির জীবন আমাদের দেশপ্রেমের প্রকৃত অর্থ শেখায়। তিনি দেখিয়েছেন, নিজের দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাও সার্থক।
  2. জাতীয় ঐক্যের প্রতীক: তাঁর নেতৃত্ব ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে একত্রিত করেছিল। আজকের দিনে, আমরা সেই ঐক্য ও সম্প্রীতির গুরুত্ব অনুভব করি।
  3. প্রতিরোধ ও সংগ্রামের চেতনা: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি আমাদের স্বাধীনতার মূল্য বোঝাতে পেরেছিলেন।
  4. স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ: নেতাজি দেখিয়েছেন যে ত্যাগ ছাড়া কোনো বড় অর্জন সম্ভব নয়।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন এমন একজন নেতা যিনি শুধু বক্তৃতায় নয়, কাজের মাধ্যমে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তাঁর কিছু বিখ্যাত উক্তি আজও আমাদের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।

  • “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
  • “আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের সেবা করা।”

এই বাক্যগুলো শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এগুলো তাঁর কাজের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করে তিনি দেখিয়েছিলেন কীভাবে সংগঠন এবং নেতৃত্ব একটি জাতিকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিতে পারে। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতার জন্য নতুন দিশা উন্মোচিত হয়েছিল।

নেতাজির জীবন থেকে শিক্ষাগুলি

নেতাজির জীবন থেকে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। তাঁর শিক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  1. দৃঢ়প্রতিজ্ঞা: যেকোনো প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার জন্য সাহস এবং দৃঢ়তা থাকা প্রয়োজন।
  2. দেশের স্বার্থে ত্যাগ: ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে দেশের স্বার্থকে স্থান দেওয়া উচিত।
  3. সক্রিয় নেতৃত্ব: শুধু বক্তব্য নয়, কাজের মাধ্যমেই নেতা হওয়া যায়।
  4. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: নেতাজি বুঝেছিলেন যে বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
  5. স্বাধীনতার মূল্য: স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকা।

২৩ শে জানুয়ারি নেতাজি দিবস বক্তব্য ভিডিও দেখুন


নেতাজি দিবস উদযাপন

নেতাজি দিবস ভারতে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটির গুরুত্বকে স্মরণ করা হয়। পতাকা উত্তোলন, প্রভাত ফেরি, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতাজির জীবন ও আদর্শ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করা হয়।

আমাদের আহ্বান

সম্মানিত শ্রোতারা, আসুন আমরা সবাই মিলে শপথ করি যে আমরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শকে ধারণ করব। তাঁর শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করব।

  1. আমাদের দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে।
  2. সমাজে ঐক্য এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
  3. আমাদের কাজের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাপ্তি

সমাপ্তি হিসেবে, আমি বলতে চাই, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু শুধু একজন নেতা ছিলেন না; তিনি ছিলেন একটি প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। তাঁর আদর্শ এবং ত্যাগ আমাদের সবসময় গর্বিত করে। আজকের এই বিশেষ দিনে, আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর দেখানো পথে চলার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করি।

ধন্যবাদ। জয় হিন্দ!

পড়ুন- ভারতের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান

FAQ:

  1. নেতাজি দিবস কবে পালিত হয়?
    ২৩ জানুয়ারি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে।
  2. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি কী?
    “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
  3. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কেন বিশেষভাবে পরিচিত?
    তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তোলেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা।
  4. নেতাজি দিবসের তাৎপর্য কী?
    এটি দেশের প্রতি তাঁর অবদান এবং দেশপ্রেমের শিক্ষাকে সম্মান জানাতে পালিত হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।