ব্লগ: ময়নুল ইসলাম শাহ্
ভূমিকা:
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মামলা দুই প্রকার: ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলা। প্রতিটি মামলার ধরন, করার নিয়ম, এবং এগুলো মোকাবেলার প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন। এই ব্লগে আমরা মামলার প্রকারভেদ, মামলা করার নিয়ম, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
১. মামলা কত প্রকার ও কী কী?
মামলা প্রধানত দুই প্রকার:
- ফৌজদারি মামলা (Criminal Case): এই ধরনের মামলা অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা হয়। যেমন: খুন, ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণ ইত্যাদি।
- দেওয়ানী মামলা (Civil Case): এই ধরনের মামলা সাধারণত সম্পত্তি, দেনা, পারিবারিক বিরোধ, চুক্তি লঙ্ঘন ইত্যাদি নিয়ে হয়।
২. ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলা করার নিয়ম
ফৌজদারি মামলা করার নিয়ম:
- থানায় অভিযোগ দাখিল: কোনো অপরাধ হলে প্রথমে স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে হবে।
- এফআইআর (FIR) নথিভুক্ত: থানায় অভিযোগ গ্রহণ করার পর পুলিশ একটি এফআইআর তৈরি করবে, যা তদন্তের ভিত্তিতে আদালতে জমা দেওয়া হবে।
- আদালতে মামলা দায়ের: তদন্ত শেষে যদি অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
দেওয়ানী মামলা করার নিয়ম:
- মোক্তার নামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) তৈরি: দেওয়ানী মামলার জন্য প্রথমে একটি অ্যাডভোকেট নিয়োগ করতে হয়।
- মামলা দায়ের: দেওয়ানী আদালতে নথিপত্র, সম্পত্তির দলিল, চুক্তি, অথবা যে কোনো আইনগত প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়।
- আদালতের নোটিশ: মামলা দায়েরের পর উভয় পক্ষকে আদালত থেকে নোটিশ প্রেরণ করা হয়।
৩. থানায় জিডি করার নিয়ম (জেনারেল ডায়েরি)
- জিডি করার কারণ: সাধারণত নিরাপত্তার জন্য, বা কোনো জিনিসপত্র হারিয়ে গেলে বা আশঙ্কাজনক ঘটনা ঘটলে থানায় জিডি করা হয়।
- জিডি করার ধাপ:
- থানায় গিয়ে জিডি ফরম পূরণ করতে হবে।
- জিডি করার সময় ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে।
- পুলিশ যদি প্রয়োজন মনে করে, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করবে।
৪. ফৌজদারি আদালত এবং এর কার্যপ্রণালী
ফৌজদারি আদালত সাধারণত চার প্রকার:
- মহানগর আদালত: বড় শহর বা মহানগরের জন্য দায়ী আদালত।
- জেলা আদালত: একটি জেলার অপরাধমূলক মামলাগুলো এ আদালতে শোনা হয়।
- ম্যাজিস্ট্রেট আদালত: প্রাথমিক স্তরের মামলাগুলোর শুনানি এ আদালতে হয়।
- সেশন আদালত: গুরুতর অপরাধের মামলা, যেমন খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি সেশন আদালতে হয়।
৫. ফৌজদারি আইনে যে ধারাগুলোতে মামলা বেশি হয়
ফৌজদারি আইনে কিছু সাধারণ ধারায় মামলার সংখ্যা বেশি দেখা যায়, যেমন:
- ৩২৩ ধারায়: স্বেচ্ছায় আঘাত করা।
- ৩৭৯ ধারা: চুরি।
- ফৌ। কা বি। ৪২০ ধার: প্রতারণা।
- ধারা ৩০৭: হত্যার চেষ্টা।
- এবং ধারা ৪৯৮(A): বিবাহিত নারীর ওপর নির্যাতন।
পড়ুন- বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮: গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ এবং বিস্তারিত বিশ্লেষণ
৬. এ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
প্রশ্ন ১: ফৌজদারি মামলা কীভাবে করা হয়?
উত্তর: ফৌজদারি মামলা করার জন্য থানায় অভিযোগ দাখিল করতে হয়, যা তদন্তের পর আদালতে গিয়ে দায়ের করা হয়।
প্রশ্ন ২: দেওয়ানী মামলা কি?
উত্তর: দেওয়ানী মামলা সাধারণত সম্পত্তি, চুক্তি লঙ্ঘন, পারিবারিক বিবাদ ইত্যাদির জন্য দায়ের করা হয়।
প্রশ্ন ৩: থানায় জিডি করার নিয়ম কী?
উত্তর: থানায় গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে একটি জিডি (জেনারেল ডায়েরি) করা হয়।
প্রশ্ন ৪: ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ফৌজদারি মামলা অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য, আর দেওয়ানী মামলা ব্যক্তিগত বা সম্পত্তিগত বিরোধের জন্য করা হয়।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলা কোথায় করা যায়?
উত্তর: ফৌজদারি মামলা সাধারণত স্থানীয় থানায় অভিযোগ করার মাধ্যমে শুরু হয়, এরপর সংশ্লিষ্ট আদালতে দায়ের করা হয়।
প্রশ্ন ৬: আপীলকী বা কাকে বলে?
উত্তর: নিম্ন আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে ঐ রায় সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে তাকে ‘আপীল’ বলে।
প্রশ্ন ৭: ‘রিভিউ’ মামলা কী বা কাকে বলে?
উত্তর: যে আদালত মোকদ্দমার রায় দেয় ঐ একই আদালতে পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করলে তাঁকে ‘রিভিউ’ বলে। দেওয়ানী মামলার রিভিউ হয়; কিন্তু ফৌজদারি মামলার রিভিউ হয় না।
প্রশ্ন ৮: ‘রিভিশন’ কাকে বলে?
উত্তর: রিভিশন হল ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চ আদালত কর্তৃক নিম্ন আদালতের কোন মামলার সিদ্ধান্ত সঠিক করার জন্য সংশোধন আদেশ প্রদান করা । রিভিউ এবং রিভিশনের মধ্যে মূল পার্থক্য হল রিভিউ দায়ের করা হয় ডিক্রী প্রদানকারী আদালতে। অন্যদিকে রিভিশন দায়ের করা হয় ডিক্রী প্রদানকারী আদালতের রিভিশন ক্ষমতা সম্পন্ন উচ্চ আদালতে ।
উপসংহার:
ফৌজদারি এবং দেওয়ানী মামলা করার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে আইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিক তথ্য ও নথি দ্বারা সাপোর্টেড মামলা দায়ের করা, এবং আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই একটি সফল মামলার মূল চাবিকাঠি।
[…] […]