চলমান বিশ্বে ইসকন: একটি তথ্যবহুল বিশ্লেষণ
ইসকন কী?
ইসকন হল “আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ” (International Society for Krishna Consciousness), যা একটি সনাতন ধর্মীয় সংগঠন। এটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি ও দর্শন প্রচারে নিবেদিত একটি আন্দোলন। ইসকনের মূল লক্ষ্য হল ভক্তি যোগের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক জীবন বিকাশ করা এবং ভগবদ্গীতার শিক্ষাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া।
ইসকনের পূর্ণরূপ কী?
ইসকনের পূর্ণরূপ হলো:
International Society for Krishna Consciousness (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ)।
ইসকনের উদ্দেশ্য কী?
ইসকনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো:
- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করা।
- ভগবদ্গীতার আদর্শ অনুযায়ী মানবজীবন পরিচালনা।
- আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং নিরামিষ জীবনধারা প্রচার।
- ভগবান কৃষ্ণের নাম ও গুণাবলী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।
ইসকনের ইতিহাস
ভারতে ইসকনের সূচনা
ইসকন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে, নিউইয়র্কে, ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ দ্বারা। এর মূল শিকড় সনাতন হিন্দু ধর্মের বৈষ্ণব মতবাদের মধ্যে রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের ভিত্তিতে প্রভুপাদ এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন।
বাংলাদেশে ইসকনের আগমন
বাংলাদেশে ইসকনের প্রসার ঘটে ১৯৭০-এর দশকে। ঢাকার স্বামীবাগ মন্দির ইসকনের বাংলাদেশ শাখার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বর্তমানে বাংলাদেশে ইসকনের বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, এবং খুলনায়।
বিশ্বজুড়ে ইসকনের প্রসার
ইসকন বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়। এর সদস্যসংখ্যা কয়েক মিলিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, এবং আফ্রিকাতেও ইসকনের মন্দির ও আশ্রম রয়েছে।
ইসকনের কার্যক্রম
বিশ্বব্যাপী ইসকনের কার্যক্রম
- হরিনাম সংকীর্তন: ভগবান কৃষ্ণের নামের প্রচার।
- প্রসাদ বিতরণ: বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ (Food for Life প্রোগ্রাম)।
- ভক্তি শিক্ষা: ভক্তি যোগ এবং ভগবদ্গীতার শিক্ষামূলক কোর্স।
- সংস্কৃতি প্রচার: ভক্তি সংগীত, নৃত্য, এবং নাটকের মাধ্যমে সনাতন সংস্কৃতির প্রচার।
বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম
বাংলাদেশে ইসকন বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে, যেমন:
- বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ।
- ধর্মীয় ও সামাজিক সচেতনতা প্রচার।
- শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ও রথযাত্রার মতো উৎসব আয়োজন।
ইসকন ও সনাতন হিন্দু মতবাদের মধ্যে পার্থক্য
- ইসকনের মূল ভিত্তি বৈষ্ণব মতবাদে। এটি শ্রীকৃষ্ণকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে বিবেচনা করে।
- সনাতন হিন্দু ধর্ম বহুদেবতাবাদে বিশ্বাস করে। এখানে ভগবান শিব, মা কালী, ভগবান গণেশ প্রভৃতিও পূজিত হন।
- ইসকন নিরামিষভোজ ও নির্দিষ্ট জীবনধারা (ভক্তি যোগ) অনুসরণে জোর দেয়, যেখানে সনাতন ধর্মে এমন বাধ্যবাধকতা নেই।
ইসকন কীভাবে এলো?
ইসকনের সূচনা হয় ১৯৬৫ সালে, যখন ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি সেখানে ভগবদ্গীতার শিক্ষাকে প্রচার করেন এবং ভক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন। নিউইয়র্কের ২৬ সেকেন্ড এভিনিউতে প্রথম ইসকন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ধীরে ধীরে এটি একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।
গাজওয়াতুল হিন্দ ও ইসকন
গাজওয়াতুল হিন্দ একটি ইসলামিক ধারণা, যা ভারতে ইসলামের বিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। ইসকনের সাথে এই ধারণার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ইসকন হিন্দু ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতীক হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
ইসকনের অনুসারীদের সংখ্যা কোথায় কতজন?
- ভারত: প্রায় ১০ মিলিয়ন অনুসারী।
- বাংলাদেশ: প্রায় ২-৩ লাখ সক্রিয় ভক্ত।
- বিশ্বজুড়ে: প্রায় ২০ মিলিয়নের বেশি।
ইসকনের ভক্তরা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির হলেও তারা একীভূতভাবে ভগবান কৃষ্ণের উপাসক।
ইসকনের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে?
ইসকন একটি দ্রুতবর্ধনশীল আধ্যাত্মিক সংগঠন। ভবিষ্যতে এটি আরও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হতে পারে, বিশেষ করে:
- যুবকদের মধ্যে ভক্তি যোগের চর্চা বাড়ানোর মাধ্যমে।
- প্রযুক্তি এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে এর শিক্ষা প্রচার।
- নতুন নতুন মন্দির স্থাপন এবং ভক্তদের সংখ্যা বাড়ানো।
সম্পর্কিত প্রশ্নাবলী ও উত্তর
১. ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা কে?
ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শ্রীল ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।
২. ইসকনের মূল মন্ত্র কী?
ইসকনের মূল মন্ত্র হল: “হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ, হরে হরে। হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম, হরে হরে।”
৩. ইসকনে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা হয়?
ইসকনে নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয় এবং প্রসাদ হিসেবে তা বিতরণ করা হয়।
৪. ইসকনের প্রধান গ্রন্থ কোনটি?
ভগবদ্গীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবতাম ইসকনের প্রধান গ্রন্থ।
৫. ইসকনে যোগ দিতে কী করতে হয়?
ইসকনে যোগ দিতে ভক্তি যোগ অনুসরণ এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি নিবেদন করতে হয়।
শত্রু সম্পত্তি ( অর্পিত সম্পত্তি)’র ইতিহাস, আইন, প্রাসঙ্গিক তথ্য, পুনর্বাসন এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট