বাংলাদেশের জেলহত্যা দিবস – ৩ নভেম্বরের অনুষ্ঠানে প্রদানের জন্য একটি বিস্তৃত বক্তব্য নিচে উল্লেখ করা হলো:


প্রিয় অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত সকল উপস্থিতি,

আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুভূতির দিনকে স্মরণ করার জন্য। ৩ নভেম্বর, বাংলাদেশের জেলহত্যা দিবস, আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক নৃশংস অধ্যায়ের স্মারক। ১৯৭৫ সালের এই দিনে, আমাদের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল, যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতির চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

সম্মানিত সুধী,

এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, দেশপ্রেম এবং মানবতা কখনও অকাতরে বিসর্জন দেওয়া যায় না।

তাদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছিলেন, তারা ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তারা দেশের মানুষের স্বার্থে লড়াই করেছেন, নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমাদের মুক্তির জন্য। কিন্তু ৩ নভেম্বরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেইসব ত্যাগ ও আত্মবলিদানকে এক অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে দেয়। এই দিনটি কেবল একটি কালো অধ্যায় নয়, বরং একটি দৃঢ় সংকল্পের দিন, আমাদেরকে প্রতিজ্ঞা করার যে আমরা যেন সেই হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটতে দেই।

এদিনে আমরা স্মরণ করি জাতির এই মহান সেবকদের, যাদের জন্য আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাঁচতে পারছি। তাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি। ইতিহাসের এই অধ্যায়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, তাদের স্মৃতি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে। এই দিনটি আমাদের স্বদেশপ্রেম ও জাতীয় ঐক্যের বার্তা বহন করে।

জেল হত্যা দিবস কেন পালন করা হয়?

জেল হত্যা দিবস বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রতি বছর ৩রা নভেম্বর পালিত হয়। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের চারজন জাতীয় নেতাঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মুহাম্মদ মনসুর আলী এবং আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি স্মরণার্থে এ দিবস পালন করা হয়।

ভাইয়েরা আমার,

আজকের সভায় আমরা একত্রিত হয়েছি দেশের জনগণের জন্য একটি ন্যায়বিচারমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আমাদের সকলের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, স্বাধীনতার চেতনাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। দেশপ্রেম, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সংগ্রাম কখনো থেমে যাবে না। আমাদের উচিত ইতিহাসের এই কঠিন দিকগুলোকে স্মরণ করে, আরও শক্তিশালী হয়ে উঠা এবং সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া।

আমরা জানি, ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল একটি পরিকল্পিত নৃশংসতা, যা আমাদের জাতিকে মানসিকভাবে দুর্বল করার একটি চেষ্টার অংশ। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি; আমরা আরও শক্তিশালী হয়েছি, কারণ আমাদের রয়েছে একটি সজাগ জাতীয় মনোভাব। আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে আমি আহ্বান জানাই—আপনারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন, এর মূলনীতি ও মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখেন। আজকের এই দিবসটি যেন একটি প্রেরণার উৎস হয়, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গণতন্ত্রের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারে।

আজকের দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নৃশংস হত্যাকাণ্ড কখনও আমাদের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পথরোধ করতে পারবে না। আমাদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে আমরা এক নিরাপদ, ন্যায়বান ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। আমাদের উচিত, সকল অনিয়ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা এবং মানবাধিকারের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করা।

এই মহান স্মৃতির দিনে, আসুন আমরা একযোগে প্রতিজ্ঞা করি—আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষুণ্ন রাখব, আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের ত্যাগকে স্মরণ রাখব এবং গণতন্ত্রের রক্ষায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

আসুন, আমরা সবাই মিলে সেই দিনের শোককে শক্তিতে পরিণত করি এবং একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করি।

আপনাদের সকলকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যারা আজ এখানে এসে আমাদের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ন অধ্যায়কে স্মরণ করার জন্য উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের সকলের প্রচেষ্টা এবং সংকল্পের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে পারব।

ধন্যবাদ।


আপনার প্রয়োজন অনুসারে এ বক্তব্যে পরিবর্তন বা সংযোজন করতে পারেন। আশা করি এটি আপনার কাজে আসবে

জাতীয় চার নেতার সমাধি কোথায়?

তিন নেতার মাজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দোয়েল চত্বর এর উত্তর পাশে অবস্থিত, বাংলার তিন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এর কবরের উপর নির্মিত।

পড়ুন- জাতীয় চার নেতার ঐতিহাসিক অবদান

3 thoughts on “৩ নভেম্বর-জেলহত্যা দিবসের বক্তব্য বা ভাষণ বা বক্তৃতা, ইতিহাস ও গুরুত্ব”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।