স্বাগত বক্তব্য কীভাবে দিতে হয় বা কীভাবে লিখতে হয়: একটি টিউটোরিয়াল
নির্দেশনাঃ ময়নুল ইসলাম শাহ্
অনুষ্ঠান, সভা, বা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে একজন বক্তার জন্য “স্বাগত বক্তব্য” দেওয়া একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। এটি অনুষ্ঠানের শুরুর দিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পুরো ইভেন্টের জন্য একটি সুর নির্ধারণ করে। সঠিকভাবে স্বাগত বক্তব্য দেওয়া আপনাকে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং ইভেন্টের পটভূমি তুলে ধরতে সহায়তা করবে।
এই ব্লগে, আমরা কীভাবে সুন্দর এবং প্রাসঙ্গিক স্বাগত বক্তব্য তৈরি করা যায় তার ধাপে ধাপে নির্দেশনা দেব।
১. প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা
স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার আগে কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন:
- ইভেন্টের ধরণ: ইভেন্টটি সামাজিক, কর্পোরেট, একাডেমিক নাকি অন্য কিছু? স্বাগত বক্তব্যের ভাষা এবং ভঙ্গি ইভেন্টের ধরণ অনুযায়ী হওয়া উচিত।
- শ্রোতাদের প্রোফাইল: শ্রোতারা কারা? তাদের বয়স, পেশা, এবং আগ্রহ সম্পর্কে ধারণা রাখুন। একাডেমিক অনুষ্ঠান এবং কর্পোরেট অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে পার্থক্য থাকে।
- বক্তব্যের দৈর্ঘ্য: স্বাগত বক্তব্য সাধারণত সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত, প্রায় ২-৫ মিনিটের মধ্যে। এটি দীর্ঘ হলে শ্রোতারা বিরক্ত হতে পারে।
২. একটি আকর্ষণীয় সূচনা তৈরি করুন
প্রথম কয়েকটি বাক্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শুরুটা আকর্ষণীয় হতে হবে। কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল:
- উষ্ণ অভ্যর্থনা: “আসসালামু আলাইকুম” বা “শুভ সকাল” বা “সুপ্রভাত” দিয়ে শুরু করুন।
- ধন্যবাদজ্ঞাপন: উপস্থিত অতিথিদের তালিকা দেখে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানান।
- অনুপ্রেরণামূলক উক্তি বা তথ্য: অনুষ্ঠানের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কোনো উক্তি বা তথ্য দিয়ে শুরু করতে পারেন।
- ব্যক্তিগত বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করা: অনুষ্ঠান ও বক্তব্যের বিষয়বস্তু অনুযায়ী ওই বিষয়ে আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা/গল্প থাকলে তা উপস্থাপন করতে পারেন। তবে তা যেন খুব বেশি ব্যক্তিগত হয়ে না যায়।
৩. ইভেন্টের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন
স্বাগত বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য হল ইভেন্টের প্রেক্ষাপট এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার করা। ইভেন্ট কেন আয়োজন করা হয়েছে, এবং কীভাবে এটি শ্রোতাদের উপকারে আসবে তা উল্লেখ করুন।
উদাহরণস্বরূপ:
“আজকের এই সম্মেলন আমাদেরকে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের নতুন দিক নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ দেবে।”
৪. সম্মানিত অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দিন
যদি ইভেন্টে বিশেষ অতিথি বা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন, তাহলে তাদের সম্মানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তাদের সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক তথ্য বা কাজের প্রশংসা করুন।
উদাহরণস্বরূপ:
“আমাদের সম্মানিত অতিথি জনাব আলী হাসান, যিনি এই শিল্পে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন এবং অসংখ্য অবদান রেখেছেন, আজকের ইভেন্টকে আরও সমৃদ্ধ করবেন।”
৫. ইভেন্টের সময়সূচী বা প্রধান বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত দিন
বক্তব্যে ইভেন্টের মূল আকর্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা দিন। এতে শ্রোতারা ইভেন্টের পুরো সময়ের জন্য আগ্রহী হবেন।
উদাহরণস্বরূপ:
“আজকের আলোচনা পর্বে আমরা প্রধানত দুটি বিষয় নিয়ে কথা বলব: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।”
৬. আশাবাদী সমাপ্তি
স্বাগত বক্তব্যের শেষে একটি আশাবাদী ও ইতিবাচক নোটে সমাপ্তি দিন। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আশা করুন।
উদাহরণস্বরূপ:
“আমি বিশ্বাস করি আজকের ইভেন্ট আমাদের সবার জন্য শিক্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক হবে। আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য আগাম ধন্যবাদ।”
৭. প্রাকটিস ও সময়ের প্রতি নজর দিন
বক্তব্য দেওয়ার আগে কয়েকবার প্রাকটিস করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং বক্তব্যটি আরও প্রাঞ্জল হবে। সময়ের মধ্যে বক্তব্য শেষ করার চেষ্টা করুন, কারণ দীর্ঘ স্বাগত বক্তব্য কখনো কখনো বিরক্তিকর হতে পারে।
স্ক্রীপ্ট- স্কুল-কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপস্থাপনা
সংক্ষেপে:
- প্রস্তুতি নিন এবং ইভেন্টের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানুন।
- শুরুতে শ্রোতাদের উষ্ণভাবে স্বাগত জানান।
- ইভেন্টের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করুন।
- সম্মানিত অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দিন।
- ইভেন্টের সময়সূচী বা মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করুন।
- ইতিবাচকভাবে বক্তব্য শেষ করুন।
- সময় মেনে বক্তব্য প্রয়োগ করুন।
উপসংহার
স্বাগত বক্তব্য দেওয়া এমন একটি দক্ষতা, যা সময়ের সাথে উন্নত করা সম্ভব। সঠিক প্রস্তুতি, প্রাসঙ্গিকতা, এবং সময়জ্ঞান এই বক্তব্যকে শ্রোতাদের কাছে স্মরণীয় করে তুলতে পারে। আশা করি এই টিউটোরিয়াল আপনার স্বাগত বক্তব্য তৈরির প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে।
আরও পড়ুন-
রাজনৈতিক বক্তব্য কীভাবে দিবেন?
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল
বিদায়ী সহকর্মীর জন্য বিদায়ী বক্তব্য
বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য
[…] […]
[…] […]
[…] […]