pexels-photo-13307172-13307172.jpg

১৫ আগস্ট দিবস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা বক্তব্য ভাষণ রচনা বাংলা

প্রিয় অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, এবং প্রিয় বন্ধুগণ- বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা জানাই।

আজ ১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি। আজ ভারতবাসীর কাছে একটি বিশেষ দিন, একটি গর্বের দিন, যা আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দ ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে। ১৯৪৭ সালের এই দিনে, ভারত দীর্ঘ ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। আজকের এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতির গৌরবময় ইতিহাসের একটি অধ্যায়, যা আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদের ঐক্য, সংহতি, এবং প্রগতির পথে পরিচালিত করে।

আজকের এই মহতী অনুষ্ঠানে কিছু বলার সুযোগ পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। সেই সাথে আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

সংগ্রামী বন্ধুগণ,

ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল দীর্ঘ, কঠিন, এবং বীরত্বপূর্ণ। ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত, আমাদের দেশবাসী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এই সংগ্রামে বহু বীর সেনানি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এবং সাধারণ জনগণ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের ত্যাগ ও বীরত্বের কারণে আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি। আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে স্বাধীনতা আন্দোলনে শহিদ সকল বীরদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কিছু ঘটনার উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রথমেই স্মরণ করছি-

মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের কথা। মহাত্মা গান্ধী, যিনি ‘বাপু’ নামে পরিচিত, স্বাধীনতা সংগ্রামে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন, সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স আন্দোলন, এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ: নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, যিনি স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। তার সাহসী নেতৃত্ব এবং বিপ্লবী চিন্তাধারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন দিশা দিয়েছিল।

ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, এবং অন্যান্য বিপ্লবীরা: ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ, সুখদেব, রাজগুরু প্রমুখ বিপ্লবীরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে।

স্বাধীনতার পরবর্তী ভারত: প্রগতি এবং চ্যালেঞ্জ

স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি আমাদের সংবিধান কার্যকর হয়, যা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবিধান আমাদের সবার জন্য সমান অধিকার, স্বাধীনতা, এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়।

ভিডিও লিংক15 august bhashan Bengali | Independence Day Speech

সম্মানিত সুধী:

স্বাধীনতার পর থেকে ভারত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। কৃষি, শিল্প, এবং পরিষেবা খাতে উন্নতি ঘটেছে। সবুজ বিপ্লব এবং প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে, এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া আমাদের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি:

ভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। আমাদের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO, চন্দ্রযান এবং মঙ্গলযান মিশনের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে আমাদের দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ভারত এখন বিশ্বনেতা হিসেবে স্বীকৃত।

সামাজিক উন্নয়ন:

স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন নীতি এবং প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণের জীবনের মান উন্নয়ন হয়েছে।

উপস্থিত স্রোতামণ্ডলি, স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন আমাদর গৌরবময় উৎসব।

স্বাধীনতা দিবস আমাদের দেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গৌরবময় দিন। এই দিনে আমরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি, দেশপ্রেমিক গান গাই, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে উদযাপন করি।

pexels-photo-13307172-13307172.jpg

জাতীয় স্তরে উদযাপন: দিল্লির লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এই অনুষ্ঠানটি সারা দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এবং এটি আমাদের দেশের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক।

স্থানীয় উদযাপন: বিদ্যালয়, কলেজ, এবং সরকারি অফিসগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা দেশপ্রেমিক গান, নাটক, এবং নৃত্যের মাধ্যমে তাদের দেশপ্রেম প্রকাশ করে। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রমও আয়োজন করা হয়।

স্বাধীনতা এবং দায়িত্ব: আমাদের প্রতিজ্ঞা

স্বাধীনতা আমাদের জন্য শুধু একটি অধিকার নয়, এটি একটি দায়িত্বও। আমাদের দেশের উন্নতি এবং সমৃদ্ধির জন্য আমরা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে ঐক্য, সহানুভূতি, এবং সহযোগিতা থাকতে হবে। আজকের দিনে আমরা শপথ করি যে আমরা আমাদের দেশকে আরও উন্নত, সমৃদ্ধ, এবং শক্তিশালী করে তোলার জন্য সবসময় চেষ্টা করব।

জাতীয় উন্নয়নে আমাদের ভূমিকা: আমাদের প্রতিদিনের কাজ এবং আচরণে দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদ প্রকাশ করতে হবে। আমাদের সবাইকে আমাদের কাজের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ, এবং সমাজসেবার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে আরও উন্নত করতে পারি।

নতুন প্রজন্মের ভূমিকা: আমাদের যুবসমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যাতে তারা দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার গুরুত্ব এবং দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

উপসংহার

আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা আমাদের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তাদের ত্যাগ আমাদের জন্য একটি প্রেরণা, এবং আমরা তাদের দেখানো পথে চলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে ঐক্য, সহানুভূতি, এবং সহযোগিতা থাকতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশকে আরও উন্নত এবং সমৃদ্ধ করে তুলি।

ধন্যবাদ।

জয় হিন্দ!

আরও পড়ুন- ভারতের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।