বিশ্ব শিশু দিবস: বাংলাদেশের শিশুদের বিকাশের চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ
সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, প্রিয় সুধী, এবং প্রিয় শিশু বন্ধুরা,
বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে এই মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি গর্বিত। শিশুদের ভবিষ্যৎই আমাদের জাতির ভিত্তি, আর তাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য আমাদের দায়িত্ব অপরিসীম। কাজী নজরুল ইসলামের “প্রলয় শিখা” কবিতা থেকে একটি পংক্তি উল্লেখ করতে চাই:
“বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না!”
এই লাইনটি আমাদের শিখায় যে, উৎপীড়িতদের থেকে দুঃখ দূর না হলে প্রকৃত শান্তি আসবে না। ঠিক তেমনি, শিশুদের জীবন থেকে সব বাধা দূর না হলে আমরা সত্যিকার উন্নয়ন অর্জন করতে পারব না।
প্রিয় শ্রোতাগণ,
বাংলাদেশে শিশুদের বিকাশের পথে বড় বড় কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে। প্রথমেই বলতে হয় দারিদ্র্যের কথা। দেশের অনেক শিশু এখনও দারিদ্র্যের কষাঘাতে পড়াশোনা এবং সঠিক পুষ্টি থেকে বঞ্চিত। পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা শিশুশ্রমের দিকে তাদের ঠেলে দিচ্ছে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
দ্বিতীয়ত, বাল্যবিবাহ এখনও বাংলাদেশের শিশুদের জন্য একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে মেয়েরা খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাল্যবিবাহের ফলে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
এছাড়া, শিক্ষার মান এবং স্কুলে ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনকভাবে উচ্চ। মানসম্মত শিক্ষা না পাওয়ায় শিশুরা উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে কঠিন করে তুলছে।
সম্মানিত অভিভাবক ও সমাজের নেতৃত্ববৃন্দ,
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য আমাদের কয়েকটি সমাধান গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, দারিদ্র্য নিরসন এবং শিশুদের জন্য বিনামূল্যে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা শিশুদের জন্য নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি।
দ্বিতীয়ত, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আরো কঠোর আইন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। শিশুরা যতক্ষণ না তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত, ততক্ষণ তাদের বিবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
তৃতীয়ত, শিশুশ্রম প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের কাজের পরিবর্তে স্কুলে ফেরাতে হবে এবং তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে যাতে তারা সন্তানদের শিক্ষার জন্য উৎসাহিত হয়।
বিশ্ব শিশু দিবসের বক্তব্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “সহজপাঠ” থেকে একটি লাইন আমাদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারে:
“বাচ্চারা হাসবে, খেলবে, শিখবে—
তাদের কণ্ঠে উঠবে জীবনের জয়গান।”
আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব শিশুদের জন্য এমন এক পৃথিবী তৈরি করা যেখানে তারা নির্ভয়ে হাসবে, খেলবে, এবং বেড়ে উঠবে।
প্রিয় শিশু বন্ধুরা,
তোমরা আমাদের স্বপ্ন। তোমাদের সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা একসাথে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ব, যেখানে তোমরা সুখী ও সফল হবে। নজরুলের “দোলনচাঁপা” কবিতার পংক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই:
“আমরা নতুন আলো জ্বালাবো,
পথের আঁধারে যারা হারিয়েছে,
তাদের খুঁজে নিয়ে আসবো।”
আসুন, আমরা সবাই মিলে শিশুদের জন্য একটি সুন্দর আগামী তৈরি করি।
ধন্যবাদ।
[…] আরও পড়ুন- বিশ্ব শিশু দিবসের বক্তব্য ২০… […]