pexels-photo-6863244-6863244.jpg

আয়কর রিটার্নের ফরম এখানে https://nbr.gov.bd/form/income-tax/ban

লক্ষ্য করুনঃ এই প্রবন্ধের শেষদিকে “পূর্বের আয়কর আইন বনাম নতুন আয়কর আইন ২০২৩: প্রধান পার্থক্যগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ” রয়েছে।

বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৩ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ, যা ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক করদাতাদের জন্য নতুন বিধান ও নিয়মাবলী নিয়ে এসেছে। এই ব্লগে আমরা এই আইনটির প্রধান বিষয়বস্তু, এর প্রভাব, এবং করদাতাদের জন্য নির্দেশনামূলক পদক্ষেপগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আইনটির প্রধান বিষয়বস্তু

১. কর হার ও স্ল্যাব:

  • ব্যক্তিগত করদাতারা: আইন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত আয়কর হার বিভিন্ন আয় স্ল্যাবের উপর ভিত্তি করে প্রগতিশীল। নিম্নোক্ত ছকে স্ল্যাব ও কর হারগুলো দেখানো হলো:
    • ০ থেকে ৩ লাখ টাকা: শূন্য শতাংশ
    • ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা: ১০ শতাংশ
    • ৬ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা: ১৫ শতাংশ
    • ১২ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা: ২০ শতাংশ
    • ৩০ লাখ টাকার উপরে: ২৫ শতাংশ
  • কর্পোরেট কর: বিভিন্ন ব্যবসার জন্য কর্পোরেট কর হার নির্ধারিত হয়েছে। যেমন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য কর হার ২৫ শতাংশ এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ।

২. করযোগ্য আয়:

  • বেতন: বেতন, বোনাস ও অন্যান্য কর্মসংস্থানের সুবিধাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • ব্যবসা ও পেশা: ব্যবসার কার্যক্রম এবং পেশাগত সেবার আয়।
  • মূলধনী লাভ: মূলধন সম্পত্তি বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত লাভ।
  • অন্যান্য উৎস: বিনিয়োগ, ডিভিডেন্ড এবং ভাড়ার আয় অন্তর্ভুক্ত।

৩. ছাড় ও অব্যাহতি:

  • আইন অনুযায়ী, বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য ছাড় এবং দানকৃত অর্থের জন্য অব্যাহতি রয়েছে।

৪. উৎসে কর কর্তন:

  • বিভিন্ন প্রদেয় অর্থ যেমন বেতন, ডিভিডেন্ড এবং চুক্তি ফি-এর উপর উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে।

৫. কর রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ:

  • কর রিটার্ন: করদাতাদের বার্ষিক কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে, যেখানে তাদের আয়, ছাড় ও করযোগ্য আয় উল্লেখ করতে হবে।
  • পরিশোধ সময়সীমা: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে, বিলম্বে জরিমানা ও সুদ আরোপ করা হতে পারে।

আইনটির প্রভাব

pexels-photo-4386366-4386366.jpg

১. উন্নত অনুবর্তিতা:

  • আইনটি স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার উপর গুরুত্ব দেয়। ব্যবসা ও ব্যক্তিগত করদাতারা তাদের আয় ও ছাড়ের সঠিক তথ্য সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ হবে।

২. রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে:

  • কর সংগ্রহ প্রক্রিয়া উন্নত করার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব বৃদ্ধি করতে চায়, যা উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও জনসেবায় ব্যবহৃত হবে।

৩. বিনিয়োগের পরিবেশ:

  • বিনিয়োগ খাতে ছাড়ের মাধ্যমে অর্থনীতির বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা হবে।

৪. ডিজিটাল কর প্রশাসন:

  • কর প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশনকে সমর্থন করে, যা করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ করতে সহায়তা করবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাবে।

নির্দেশনামূলক পদক্ষেপ

১. আপনার কর দায়বদ্ধতা বুঝুন:

  • আপনার আয় ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনুযায়ী কর হার ও স্ল্যাব সম্পর্কে জানুন।

২. সঠিক রেকর্ড সংরক্ষণ:

  • আপনার আয়, ব্যয় ও ছাড়ের সঠিক রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।

৩. সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ:

  • নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ নিশ্চিত করুন, যাতে জরিমানা এড়ানো যায়।

৪. পেশাদার সাহায্য নিন:

  • কর আইনের জটিলতা নিরসনে ট্যাক্স কনসালটেন্ট বা উপদেষ্টার সাহায্য নিতে পারেন।

পূর্বের আয়কর আইন বনাম নতুন আয়কর আইন ২০২৩: প্রধান পার্থক্যগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৩ পূর্বের আইনের তুলনায় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। নিম্নে এই পরিবর্তনগুলো সংখ্যার মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন করা হলো:

১. কর হার ও স্ল্যাব

পূর্বের আয়কর আইন:নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
০ থেকে ২.৫ লাখ টাকা: শূন্য শতাংশ০ থেকে ৩ লাখ টাকা: শূন্য শতাংশ
২.৫ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা: ১০ শতাংশ৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা: ১০ শতাংশ
৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা: ১৫ শতাংশ৬ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা: ১৫ শতাংশ
১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা: ২০ শতাংশ১২ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা: ২০ শতাংশ
৩০ লাখ টাকার উপরে: ২৫ শতাংশ৩০ লাখ টাকার উপরে: ২৫ শতাংশ
করহারের পরিবর্তন

২. বেতন ও ব্যক্তিগত করযোগ্য আয়ের ছাড়

পূর্বের আয়কর আইন:নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
বিনিয়োগের ওপর সীমিত ছাড় ও অব্যাহতি ছিল।বিনিয়োগের জন্য বর্ধিত ছাড় ও অব্যাহতির বিধান রয়েছে।
চিকিৎসা, শিক্ষা ও গৃহঋণ সুদ সম্পর্কিত কিছু ছাড় ছিল।চিকিৎসা, শিক্ষা ও গৃহঋণ সুদের ছাড়গুলো আরও বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

৩. কর্পোরেট কর হার

পূর্বের আয়কর আইন:নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: ২৫ শতাংশপাবলিক লিমিটেড কোম্পানি: ২৫ শতাংশ
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি: ৩৫ শতাংশপ্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি: ৩০ শতাংশ

৪. উৎসে কর কর্তন

  • পূর্বের আয়কর আইন:
    • বেতন, ডিভিডেন্ড, চুক্তি ফি ইত্যাদির উপর উৎসে কর কর্তন ছিল।
  • নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
    • উৎসে কর কর্তনের বিধান আরও বিস্তৃত এবং নির্দিষ্ট করা হয়েছে, বিভিন্ন ধরণের আয় ও পেমেন্টের উপর উৎসে কর কর্তনের হার ও শর্তাবলী সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

৫. কর রিটার্ন দাখিল ও পরিশোধ

  • পূর্বের আয়কর আইন:
    • বার্ষিক কর রিটার্ন দাখিল এবং কর পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর ছিল না।
  • নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
    • বার্ষিক কর রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের সময়সীমা কড়াকড়ি ভাবে প্রযোজ্য করা হয়েছে, এবং দাখিল ও পরিশোধে বিলম্বে কঠোর জরিমানা ও সুদের বিধান রয়েছে।

৬. ডিজিটাল কর প্রশাসন

  • পূর্বের আয়কর আইন:
    • কর প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন প্রাথমিক স্তরে ছিল, কিন্তু অনেক প্রক্রিয়া এখনো ম্যানুয়াল ছিল।
  • নতুন আয়কর আইন ২০২৩:
    • কর প্রশাসনের সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যাতে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ সহজ হয় এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো যায়।
  • বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৩ পূর্বের আইনগুলির তুলনায় অনেক পরিবর্তন ও উন্নতি এনেছে, যা কর ব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ, কার্যকর এবং প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ করেছে। এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নতুন নিয়মাবলী মেনে চলা করদাতাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপসংহার

বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৩ দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি একটি ন্যায্য ও কার্যকর কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনটির প্রধান বিষয়বস্তু ও প্রভাবগুলি সম্পর্কে জানলে করদাতারা সঠিকভাবে অনুবর্তিতা পালন করতে পারবেন এবং এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। সরকারের কর নীতির ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনগুলির সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তথ্যসমৃদ্ধ থাকা এবং সক্রিয়ভাবে কর পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন- ভূমি আইন ২০২৩ দখল সংক্রান্ত অপরাধ ও প্রতিকার

2 thoughts on “বাংলাদেশের নতুন আয়কর আইন ২০২৩: কিছু জরুরী নির্দেশনা”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।