২৪ এর গণঅভ্যুত্থান কবিতা

লিখেছেনঃ ময়নুল ইসলাম শাহ্‌

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ কী?

বাংলাদেশের ‘জুলাই বিপ্লব‘ বা ‘জুলাই অভ্যূত্থান’ বা ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান বলতে । ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের ১ দফা দাবীতে ছাত্র-জনতার গণ- আন্দোলনকে বোঝায়। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকারের দমনের মুখে পরে। যার ফলে সেই আন্দোলন রূপান্তরিত হয়ে ছাত্র-জনতার এক-দফার গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়। এ আন্দোলনের ফলে আওয়ামীলীগ শাসিত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ন্যাক্কারজনক পতন ঘটে। (ময়নুল ইসলাম শাহ্‌)

জুলাই বিপ্লবের পটভূমি (কোটা সংস্কার আন্দোলন)

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের মূল দাবি ছিল । ৫৫ শতাংশ কোটা বাতিলের। পরবর্তীতে সরকার কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারী করেছিল। কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করে।

২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর মাসে । বাংলাদেশ সরকারের জারি করা কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে সূচনা হয়। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিলো, সরকার বিচার বিভাগের উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ এর মাধ্যমে কোটা পুনর্বহালের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।

এই আন্দোলনে তৎকালীন শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার দমন-পীড়ন শুরু করলে এটি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতের দিল্লিতে পলায়ন করতে বাধ্য হন। ফলে বাংলাদেশ সাংবিধানিক সংকটে পড়ে। এর কয়েকদিন পরে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। [ জুলাই বিপ্লব ২০২৪ রচনা ]

পড়ুন- জুলাই অভ্যুত্থানের কবিতা ৩৬ জুলাই বিপ্লব নিয়ে কবিতা

কোটা আন্দোলন কীভাবে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়?

২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন কিছুদিন চলার পর সরকারের কঠোর পদক্ষেপ ও অগ্রহণযোগ্য আচরণের কারণে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকার প্রথমে আন্দোলনকারীদের দমন করতে নানা কৌশল প্রয়োগ করে । শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন, আটক, এবং ছাত্রলীগ ও পুলিশের আক্রমণ আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর । আন্দোলন দ্রুত গতিশীল হয় এবং দেশব্যাপী সমর্থন লাভ করে।

প্রথমদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন কেবল সভা-সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদেররাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সেদিন রাতেই তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশেরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধ্বনিত হতে থাকে কিছু স্লোগান- “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার”। ” লাখো শহিদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না”

পরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সেইসাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। এসব হামলায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।

১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন অতি দ্রুত পুরো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে।

জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিকা

সরকার শুরুতে আন্দোলনের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার চেষ্টা করলেও পরে কঠোরভাবে দমননীতির আশ্রয় নেয়। শেখ হাসিনার সরকার আন্দোলনকারীদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সংলাপ করতে ব্যর্থ হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ছাত্রসংগঠনগুলো আন্দোলনকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। সরকার সমালোচনার মুখে পড়লেও, শিক্ষার্থীদের দাবি উপেক্ষা করে তাদের দমন করতে আওয়ামীলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতার ছাত্রলীগকে সম্পৃক্ত করে। এর ফলে আন্দোলন আরও বিকশিত হয় এবং জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি ঘৃণা বাড়তে থাকে।

পড়ুন- ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হল কেন? রাজনৈতিক ও আইনী বিশ্লেষণ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সমন্বয়কদের ভূমিকা

কোটা আন্দোলনের সমন্বয়করা আন্দোলনকে সংগঠিত করতে এবং নেতৃত্বের ক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ আন্দোলনের সামগ্রিক কাঠামোতে নেতৃত্ব এবং সুষ্ঠু সংহতি আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংহতির মজবুত বন্ধন গড়ে তোলে। বিভিন্ন পর্যায়ের সমন্বয়করা একযোগে কাজ করে আন্দোলনকে সুসংগঠিত ও কার্যকর করার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা এবং কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করেন। আন্দোলন দমন করতে একপর্যায়ে সরকার গোপনে সমন্বয়কদের গ্রেফতার করে। এর ফলে আন্দোলন আরও বেশি বেগবান হয়।

সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম হলঃ নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, মো. মাহিন সরকার ও আব্দুল কাদের। এদের মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এই দুজন ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন। সমন্বয়কদের তালিকা দেখুন

১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ( জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ)

১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্রতর হতে শুরু করে। ২৯ জুলাই চূড়ান্ত সংঘর্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের হামলা হয়, যা শিক্ষার্থীদের ক্রোধকে আরও উস্কে দেয়। এরই মাঝে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার। সারাদেশে ইন্টারনেট প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সরকারের বিরোধিতা করার অভিযোগে প্রায় সকল জেলায় পুলিশ গণ-গ্রেফতার চালায় ও হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন কিছু না কিছু মানুষ নিহত হতে থাকে। এ আন্দোলন ছাত্র, জনতা, পথচারী, শিশুসহ দেড় হাজারের অধিক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। কোথাও কোথাও চোরাগোপ্তা হামলা ও অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটতে থাকে। তা সত্ত্বেও অঞ্চলভিত্তিক সমন্বয়কদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার পতন হয়। লাখো মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‘গণভবন’ এর দিকে যাত্রা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির নিকট জমা দিয়ে সেনাবাহিনির সহায়তায় হেলিকপ্টারযোগে ভারতের দিল্লিতে পালিয়ে যান। যার ফলে প্রধানমন্ত্রীবিহীন চলমান সংসদ ভেঙ্গে যায় বা অচল হয়ে যায়। এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃবৃন্দ গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়। [ জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪ অনুচ্ছেদ রচনা ]

জুলাই বিপ্লবের শহিদদের তালিকা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ বিশেষভাবে আলোচনার দাবী রাখে। তাদের পরিচিতি এবং জীবন কাহিনী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁদের মধ্যে রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী, যাদের জীবন বিসর্জনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শহীদদের স্মরণে এই বিপ্লব একটি চিরন্তন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  1. আবু সাঈদ (২২) — বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
  2. মো. ফারুক — একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী।
  3. ওয়াসিম আকরাম — চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।
  4. ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) — ওমরগনি এম.ই.এস কলেজের ছাত্র ছিলেন।
  5. মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ — বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর (বিইউপি) ছাত্র।
  6. তাহির জামান প্রিয় — সাংবাদিক।
  7. রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ — টঙ্গী সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
  8. শেখ ফাহমিন জাফর (১৮) — টঙ্গী সরকারি কলেজে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
  9. মো. শাহজাহান (২৫) — তিনি নিউমার্কেট এলাকার হকার।
  10. সিয়াম (১৮) — তিনি গুলিস্তানের একটি ব্যাটারির দোকানের কর্মচারী।

শহিদদের সম্পূর্ণ তালিকা পেতে এখানে ক্লিক করুন।

[ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও ফলাফল ২০২৪, জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব, জুলাই বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাস বা জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস ২০২৪, ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের নাম কি? ছাত্র বিপ্লব কি? গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল? ]

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ভূমিকা

এই বিপ্লবে পুলিশের ভূমিকা ছিল আন্দোলনকারীদের দমন ও নির্যাতনে সরকারে আদেশ পালন করা। আন্দোলন দমাতে তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। মানুষ হত্যা করে পুড়িয়ে দিয়েছে বা রাস্তায় লাশ ফেলে দিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে ঢালাওভাবে গ্রেফতার চালিয়েছে। এতে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ তাদের নিরপেক্ষতাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এই বিপ্লবে ছাত্রলীগের তৎপরতা ছিল আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দমননীতি অবলম্বন করা। একটি বৃহত্তর ছাত্রসংগঠণ হওয়া সত্ত্বেও তারা সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থবিরুদ্ধ কাজে লিপ্ত থেকেছে। সাধারণ ছাত্রদের যৌক্তিক দাবী আদায়ে সমর্থন না দিয়ে, সহপাঠীদের সার্থ রক্ষা না করে তারা বরং সরকারের অন্যায় সিদ্ধান্তকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে গেছে। ছাত্রলীগের এসব কার্যকলাপ জনগণের মধ্যে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি করে গেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা

জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনী মূলত নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। সরকারবিরোধী এই আন্দোলনে সেনাবাহিনী সরাসরি অংশ নেয়নি, তবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তাদের অবস্থান সুসংহত ছিল। পুলিশের অব্যবস্থাপনার কারণে গণ-আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনী মাঠে নামে। এর ফলে পুলিশের অত্যাচার বন্ধ হয় এবং আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত হতে থাকে। জুলাই বিপ্লবে সরকারে পক্ষে না দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনী তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ রাখে, যা আন্দোলনকারীদের জন্য সহায়ক ছিল।

বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও সরকার পরিচালনায় সেনাবাহিনী আস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী দীর্ঘ সময় পুলিশ নিজেদের নিরাপত্তার অযুহাতে কর্মবিরতি পালন করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী দেশের থানাসমূহকে এবং সাধারণ মানুষকে নিরিবিচ্ছিন্নভাবে নিরাপত্তা দিয়ে গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিজিবির ভূমিকাঃ


বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আন্দোলন চলাকালে নিরপেক্ষ ছিল। তবে, জুলাইএর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিজিবি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। যেমন: বিজিবি হাসপাতালে অসংখ্য আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা প্রদান করেছে। দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান করেছে, সীমান্তবর্তী থানাগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করেছে। রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেছে। পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনে ভূমিকা পালন করেছে। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সরকারের প্রায় অর্ধশত বিতর্কিত ব্যক্তিদের সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টাকালে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। সর্বোপরি, জুলাই বিপ্লব পরবর্তী অগোছালো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিজিবি বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপুর্ণ দপ্তর ও স্থাপনা সুরুক্ষায় দায়িত্বরত থেকেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ( জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল)

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন। প্রধান-উপদেষ্টা-ও-উপদেষ্টাগণের তালিকা দেখুন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম

নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সর্বস্তরে সংস্কারমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার, প্রশাসনের স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা এবং বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জুলাই গণহত্যার বিচারকার্য শুরু করেছে। দেশে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উন্নত ও দলগুলোকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন প্রভৃতি বিষয়ে সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে চলেছে।

জুলাই বিপ্লব বা জুলাই অভ্যুত্থানের গুরুত্ব কী?

জুলাই বিপ্লব ২০২৪ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এ বিপ্লব তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার দাবিতে সংঘটিত হয়েছিল এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে জাতিকে একত্রিত করেছিল। শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন জনগণের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কারের পথে বাংলাদেশের জন্য আশার আলো দেখায়, যেখানে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা, এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। ( ময়নুল ইসলাম শাহ্‌ )

উপসংহার

2024জুলাই বিপ্লব সম্পর্কে উপসংহারে বলা যায়, জুলাই বিপ্লব ২০২৪ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এ বিপ্লব দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো উন্মোচন করেছে এবং তরুণ প্রজন্মের সচেতনতা ও অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হতে সহায়ক হয়েছে। জনগণের অধিকার রক্ষায় এই বিপ্লব একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং নতুন শাসন ব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

[ জুলাই বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল ২০২৪, জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব, জুলাই বিপ্লবের প্রভাব আলোচনা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাস বা জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস ২০২৪ ]

জুলাই বিপ্লব FAQ

প্রশ্নঃ ৩৬ জুলাই কী বা ৩৬শে জুলাই এর অর্থ কী?

উত্তরঃ ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের জেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। আন্দোলনের সফলতাকে আন্দোলনকারীরা “ বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা” বলে আখ্যা দেন এবং ৫ আগস্ট তারিখটিকে ‘৩৬ জুলাই’ হিসেবে অভিহিত করেন। ( ময়নুল ইসলাম শাহ্‌)

প্রশ্নঃ ছাত্র বিপ্লব কি?

উত্তরঃ ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব বলতে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ২০২৪-এর যৌথ আন্দোলনকে বোঝায়।

প্রশ্নঃ ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বা দলের নাম কী?

২০২৪ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন ‘সমন্বয়ক’ সারা দেশে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদান করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন একক কোনো নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বা দল দ্বারা পরিচালিত হয় নি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলিগ ছাড়া সকল দল সংগঠন ও ছাত্র-জনতা এই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিল।

প্রশ্নঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি?

উত্তরঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হলো এমন একটি সরকার, যা মূলত একটি দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে গঠিত হয়, সাধারণত কোনো সংকটকালীন পরিস্থিতি বা নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে। এই সরকার নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এর সদস্যরা সাধারণত নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব হন এবং তাদের কাজ হয় স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতাসীন থাকা এবং স্থায়ী সরকার গঠনের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা।

প্রশ্নঃ জুলাই বিপ্লবের স্লোগান কী?

উত্তরঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশেরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধ্বনিত হতে থাকে কিছু স্লোগান- “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার”– এগুলোই জুলাই অভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য স্লোগান।

প্রশ্নঃ জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেন হয়েছিল?

উত্তরঃ ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারকে উৎখাত করার জন্য। প্রথমে এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকলেও গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় এই আন্দোলন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। – ময়নুল ইসলাম শাহ্‌

প্রশ্নঃ ১ দফা দাবি কী?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারা ৩রা আগস্ট ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন, এজন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে এক দফা আন্দোলন নামেও ডাকা হয়ে থাকে। নির্বিচারে গণহত্যা চালানোর জন্য ছাত্র-জনতার যৌথ অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত হয়; তাই এই আন্দোলনকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেও অভিহিত করা হয়।

প্রশ্নঃ জুলাই বিপ্লবের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে পারে?
বিপ্লবের ফলে রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, ও স্বচ্ছতার একটি নতুন অধ্যায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্নঃ জুলাই বিপ্লবে জনগণের ভূমিকা কী ছিল?
সারা দেশের জনগণ এই আন্দোলনে একত্রিত হয়ে সরকার পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রশ্নঃ জুলাই বিপ্লব কি ভবিষ্যৎ আন্দোলনের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে?
হ্যাঁ, এ বিপ্লব ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রেরণার উৎস এবং পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই সাথে তরুণ বিশেষ করে ছাত্রদের অধিকার সচেতন ও রাজনীতি সচেতন করবে।

আরও পড়ুন- যে কারণে বাতিল হয়েছে ৮টি জাতীয় দিবস

ডঃ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী বৈধ?

3 thoughts on “জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ ইতিহাস রচনা বা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লব ২০২৪ ঘটনাপ্রবাহ”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।