চলমান ফিলিস্তিন-ইস্রায়েল যুদ্ধ: ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি আবেগঘন মানবিক ভাষণ বা বক্তৃতা
🕊️ ফিলিস্তিনের পক্ষে একটি হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য বা ভাষণ
প্রিয় ভাইয়েরা,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আমি ময়নুল ইসলাম শাহ্, আপনাদের সামনে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ, মানবিক এবং ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর কিছু কথা বলতে এসেছি। আমার আজকের আলোচনার বিষয়, “ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর চলমান নিপীড়নের ইতিহাস এবং আমাদের অবস্থান।”

🕯️ ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত ইতিহাস শুরু হয় ১৯৪৮ সালে ইস্রায়েলের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সেই থেকে এক দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক অধ্যায় শুরু।
সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত—গাযা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম—সবই হয়ে উঠেছে যুদ্ধের ময়দান।
ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস, শিশুহত্যা, নারীদের উপর নির্যাতন, হাসপাতাল ও স্কুলে বোমাবর্ষণ—এসব যেন আজকের নিয়মিত সংবাদ। সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় হলো, ইরানসহ দু-একটি দেশ বাদে পুরো মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুসলিম নিধনের বিপক্ষে দৃশ্যমান কোনো অবস্থান গ্রহণ করেনি। অথচ, আমেরিকাসহ অনেক খ্রিষ্টান রাষ্ট্র ইসরাইলের ইহুদিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আমরা মানবিক বিশ্বে একরম ভয়াবহ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই, একই সাথে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর কাপুরুষতাকে ধিক্কার জানাই।
প্রিয় ভাইয়েরা, এই সংগ্রাম যেন ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের একার সংগ্রাম। যেন সত্যের লড়াইয়ে কেবল গাযাবাসী একার দায়। আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অদম্য সাহসিকতাকে সাদুবাদ জানাই। আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা তাদের প্রতি সংহতি জানাই।
সংগ্রামী মুসলিম জনতা, আজকের এই সমাবেশ থেকে আমি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে নিহত সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। মহান আল্লাহ্ যেন তাদের জান্নাতের মর্যাদাপুর্ণ স্থান দান করেন। আমীন। সেই সাথে গভীর সমবেদনা জানাই এই অন্যায় যুদ্ধে ইহুদি সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে আহত লাখো ফিলিস্তিনি ভাই, বোন ও শিশুর প্রতি। মহান আল্লাহ্ তাদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন।
🔥 চলমান যুদ্ধ ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
- গাযা স্ট্রিপে নিহতের সংখ্যা: ৫০,০০০ এর বেশি, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু।
- আহত: প্রায় ১০০০০০+
- গৃহহীন: প্রায় ২৫ লক্ষ ফিলিস্তিনি
- বিধ্বস্ত স্কুল ও হাসপাতাল: ১০০০+
- জীবনধারণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস: পানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ সবই নিঃশেষ।
- এই সংঘাত বর্তমানে সারা মধ্য-প্রাচ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংঘাতে মারা যান
- ১। সাবেক হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ।
- ২। সাবেক হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ।
- ৩। সাবেক ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি
💔 প্রিয় বন্ধুগণ, আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষেই কেন দাঁড়াব? কারণ-
- এই যুদ্ধ কেবল একটি ভৌগোলিক লড়াই নয়, বরং একটি মানবিক ও নৈতিক সংগ্রাম।
- ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষা বৈধ, ন্যায়সংগত।
- বিশ্ব মানবতা যখন নীরব, তখন আমাদের কণ্ঠই হতে পারে ওদের সাহস।
- ফিলিস্তিনের বুকে আছে আল-আকসা মসজিদ, যা মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান।
- ইহুদি সাম্রাজ্যবাদ থেকে এই বিশ্বসভ্যতাকে রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেকের নৈতক দায়িত্ব।
📖সম্মানিত উপস্থিতি, ফিলিস্তিন নিয়ে মহানবী (সা.)-এর হাদিস ও ভবিষ্যদ্বাণী আমি আপনাদের স্মরণ করে দিতে চাই।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তুমি যদি পারো, তবে ফিলিস্তিনে গমন করো এবং সেখানে নামাজ পড়ো। কারণ এটি (বাইতুল মুকাদ্দাস) নবীদের ভূমি।”
— (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৪১০)
আরেক হাদিসে তিনি বলেন:
“আমার উম্মতের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের উপর অটল থাকবে। যারা তাদের বিরুদ্ধ হবে, তারা তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। তারা বাইতুল মুকাদ্দাস ও তার চারপাশে অবস্থান করবে।”
— (মুসলিম, হাদিস: ২৪৮৮)
এটি স্পষ্ট করে দেয় যে, ফিলিস্তিনের মুজাহিদগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। বিজয় আমাদের আসবেই ইনশাআল্লাহ।
✊ ফিলিস্তিন নিয়ে স্লোগান
- “From the River to the Sea, Palestine will be Free!”
- “গাযা বাঁচাও, ফিলিস্তিন বাঁচাও!”
- “Stop Genocide in Gaza!”
- “We Stand with Humanity, We Stand with Palestine!”
- “ইসলামের শত্রুরা, হুশিয়ার-সাবধান”
- “free free Palestine”
✍️ ফিলিস্তিন নিয়ে একটি কবিতা
রক্তে লেখা ইতিহাসে, নাম লেখা এক ভূখণ্ড,
যেখানে শিশুর কান্না আর পাথরে লেখা গর্ব।
ফিলিস্তিন, ও ফিলিস্তিন! তোমার পতাকা উড়ুক চিরকাল—
জয় হোক মানবতার, জয় হোক তোমার সংগ্রামকাল।
🤲 ফিলিস্তিনিদের বিজয়ের জন্য দোয়া ও প্রত্যাশা
হে আল্লাহ!
তুমি ফিলিস্তিনের নিপীড়িত ভাই-বোনদের হেফাজত করো।
তাদেরকে সাহস দাও, ধৈর্য দাও, বিজয় দাও।
দখলদারদের অন্যায় থেকে তুমি আমাদের মুক্ত করো।
আমাদের হৃদয়ে মানবতা, ন্যয়বিচার ও সহমর্মিতার আলো জ্বালিয়ে দাও।
আমীন।
আরও পড়ুন– ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: সম্ভাব্য পরিণতি ও বৈশ্বিক প্রভাব
🙋 FAQ (প্রশ্ন ও উত্তরসহ)
১. ফিলিস্তিন-ইস্রায়েল যুদ্ধ কীভাবে শুরু হয়?
১৯৪৮ সালে ইস্রায়েল রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
২. বর্তমানে ফিলিস্তিনে কী পরিস্থিতি?
ফিলিস্তিন বিশেষ করে গাযা ভূখণ্ডে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে।
৩. ফিলিস্তিনে কত মানুষ নিহত হয়েছেন?
২০২৩-২৪ সালের যুদ্ধে প্রায় ৩০,০০০+ মানুষ নিহত হয়েছেন।
৪. মুসলমান হিসেবে ফিলিস্তিন নিয়ে আমাদের করণীয় কী?
দোয়া, সচেতনতা সৃষ্টি ও মানবিকতা জাগ্রত করা।
৫. বাইতুল মুকাদ্দাস কোথায়?
ফিলিস্তিনের জেরুজালেম শহরে অবস্থিত।
৬. ইসলাম কি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান করে?
হ্যাঁ, হাদিস ও ইসলামের আলোকে ফিলিস্তিন মুসলমানদের পক্ষে থাকা আবশ্যক।
৭. ফিলিস্তিনে শিশু হত্যার পরিসংখ্যান কত?
প্রায় ১২,০০০+ শিশু নিহত হয়েছে এ পর্যন্ত।
🙋 FAQ (প্রশ্ন ও উত্তরসহ)
৮. ফিলিস্তিন নিয়ে মহানবী (সা.) কী বলেছেন?
তিনি ফিলিস্তিনকে পবিত্র ভূমি বলেছেন এবং উম্মতের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
৯. কীভাবে আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে পারি?
সমাবেশ, ভাষণ, লেখালেখি ও সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা ছড়িয়ে।
১০. “From the River to the Sea” এর অর্থ কী?
ইহুদিবাদী দখল থেকে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন মুক্ত করার আহ্বান।
১১. ইস্রায়েলের পক্ষে কে?
বিশ্বের বেশ কিছু পশ্চিমা শক্তি ইস্রায়েলকে সমর্থন করছে।
১২. ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কীভাবে সম্ভব?
আন্তর্জাতিক চাপে, মুসলিম ঐক্যে ও ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে।
১৩. ফিলিস্তিনের পতাকা কেমন?
কালো, সাদা, সবুজ ও লাল রঙের সমন্বয়ে তৈরি।
১৪. ফিলিস্তিন কী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র?
আংশিক স্বীকৃত; জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে রেখেছে।
🙋 FAQ (প্রশ্ন ও উত্তরসহ)
১৫. গাযা কোথায়?
ফিলিস্তিনের দক্ষিণ উপকূলীয় একটি ভূখণ্ড।
১৬. ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ালে কি রাজনৈতিক সমস্যা হয়?
কিছু দেশে হয়, কিন্তু মানবিকভাবে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না।
১৭. “Free Palestine” মানে কী?
ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
১৮. কিভাবে ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করা যায়?
আর্থিক সাহায্য, সচেতনতা, দোয়া ও মানবাধিকার সংস্থার মাধ্যমে।
১৯. ফিলিস্তিনে মুসলিম জনসংখ্যা কত?
প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি।
২০. আমরা ভাষণে কীভাবে ফিলিস্তিনের জন্য বলব?
মানবিকতা, ইসলামের দৃষ্টিকোণ ও ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরে।