Essay Writing: History of Development of Bangladesh (1947-1971) By Moynul Islam Shah

ভূমিকা

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহকেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বলে অভিহিত করা হয়।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস একটি সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাসে রয়েছে অগণিত মানুষের ত্যাগ, বীরত্ব এবং দৃঢ় সংকল্পের কাহিনী। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এই ইতিহাস গভীরভাবে প্রোথিত আমাদের জাতির আত্মপরিচয়ে।

পূর্ব পাকিস্তানের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশের বিভাজনের ফলে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি ভূখণ্ডের সৃষ্টি হয়। এই বিভাজন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোর জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবির ফলস্বরূপ ঘটে। তবে, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্য দ্রুত প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনুভব করতে থাকে যে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে।

ভাষা আন্দোলন

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সরকার উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আন্দোলনে নামলে পুলিশ গুলি চালায় এবং সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ শহীদ হন। এই ঘটনা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম প্রহরে পরিণত হয়।

ছয় দফা আন্দোলন

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি ঘোষণা করেন, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। ছয় দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনসমর্থন পায় এবং রাজনৈতিক সচেতনতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করে, যা আন্দোলনের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ভারতের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান

১৯৭০ সালের নির্বাচন

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের অধিকার লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এবং সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনী ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এই সংকট পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির সূত্রপাত করে।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনা

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান শুরু করে, যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনরত বাঙালিদের দমন করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে।

মুক্তিযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন

মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ, ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, এবং বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা কৌশলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে থাকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন লাভ করে, বিশেষ করে ভারতের। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়।

বিজয় এবং স্বাধীনতা

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই দিনটি বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। অবশেষে, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস আমাদের জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়। এই ইতিহাসে রয়েছে ত্যাগ, বীরত্ব, এবং সংগ্রামের কাহিনী। এই ইতিহাস আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের অংশ এবং আমাদের ভবিষ্যৎকে আলোকিত করার অনুপ্রেরণা। স্বাধীনতার এই ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে আমাদের উচিত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বই

One thought on “বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ধারাবাহিক ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৭১)”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।