নবীনবরণ অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে একটি বক্তব্যের খসড়া নিচে দেওয়া হলো:
বক্তব্য:
শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ,
আমাদের প্রিয় সিনিয়র ভাই-বোনেরা,
এবং আমার সহপাঠী নবীন শিক্ষার্থী বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার।
আজকের এই বিশেষ দিনে, আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সত্যিই আমি কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। নবীন হিসেবে এই মঞ্চে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভীষণ সৌভাগ্যবান মনে করছি। সর্বপ্রথম, আমি অধ্যক্ষ মহোদয় এবং সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের এই কলেজে ভর্তি হতে এবং আমাদেরকে এই সুন্দর নবীনবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে।
আমরা যখন এই কলেজে প্রথম পা রাখলাম, তখন থেকেই অনুভব করতে পেরেছি, এটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি পরিবার। একটি পরিবার যেখানে আমরা শিখবো, বেড়ে উঠবো, এবং জীবনের সঠিক পথ খুঁজে পাবো। এই প্রতিষ্ঠানে আসা আমাদের জীবনের একটি বড় ধাপ, কারণ এটি আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি নির্মাণের জায়গা। আজকের এই অনুষ্ঠান সেই যাত্রার প্রথম দিন, এবং আমরা সবাই এই নতুন অধ্যায়টি শুরু করতে প্রস্তুত।
নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ:
কলেজে প্রবেশ করা মানে একটি সম্পূর্ণ নতুন অধ্যায় শুরু করা। আমাদের স্কুলজীবনের সঙ্গে কলেজজীবনের পার্থক্য অনেক বড়। স্কুলে আমরা একটি নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভ করেছি, কিন্তু কলেজের পরিবেশ আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এখানে আমরা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব না, বরং জীবনকে বুঝতে শিখবো, সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবো, এবং সমাজের উন্নয়নে কীভাবে অবদান রাখতে পারি, তা শিখবো।
নতুন একটি প্রতিষ্ঠান, নতুন শিক্ষকবৃন্দ, নতুন বন্ধু এবং সহপাঠীদের সাথে মানিয়ে নেওয়াটা হয়তো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, এই চ্যালেঞ্জগুলোই আমাদের আরও শক্তিশালী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলবে। আমাদের শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখবো, এবং সিনিয়র ভাই-বোনদের কাছ থেকে প্রেরণা এবং দিকনির্দেশনা পাবো।
চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ:
কলেজজীবনে চ্যালেঞ্জ আসবেই—এটা আমাদের সামনে একটি অপ্রতিরোধ্য সত্য। তবে সেই সঙ্গে আমাদের জন্য অনেক সুযোগও রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে পরিণত করতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, সাফল্য শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে নতুন কিছু শেখার এবং নিজেকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলার সুযোগ এনে দেয়।
এখানে আমরা অনেক নতুন বিষয় শিখবো, যা আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রসারিত করবে এবং আমাদেরকে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। শুধু একাডেমিক ফলাফল নয়, বরং নৈতিক এবং মানবিক গুণাবলির বিকাশও আমাদের শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি আশা করি, আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবো।
সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং নেতৃত্বের গুণাবলি:
এই কলেজ আমাদের জন্য কেবল পড়াশোনার স্থান নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিগত বিকাশের কেন্দ্রও। এখানে সহশিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। শিক্ষার পাশাপাশি বিতর্ক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ক্রীড়া ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা আমাদের নেতৃত্বগুণ বিকাশ করতে পারবো। আমাদের সবার মধ্যে কোনো না কোনো প্রতিভা লুকিয়ে আছে, এবং এই কলেজ সেই প্রতিভাকে বিকশিত করতে সহায়তা করবে।
একজন সফল মানুষ হতে হলে কেবল মেধাবী হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং নেতৃত্বের গুণাবলি, সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা, এবং মানুষ হিসেবে সৎ ও নৈতিক হতে হবে। এই কলেজ আমাদের সেই সমস্ত গুণাবলি অর্জন করার সুযোগ দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
সিনিয়রদের প্রতি কৃতজ্ঞতা:
আমাদের সিনিয়র ভাই-বোনদের আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তোমাদের পথ দেখানো, পরামর্শ, এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আমরা জানি, যেকোনো প্রয়োজনে আমরা তোমাদের পাশে পাবো। তোমাদের অভিজ্ঞতা আমাদের পথ দেখাতে সাহায্য করবে, এবং আমরা চাই তোমরা আমাদেরও সঠিক পথে চালিত করবে।
কলেজের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য:
আমাদের এই কলেজের যে গৌরবময় ইতিহাস এবং ঐতিহ্য রয়েছে, তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব বেরিয়ে এসেছেন, যারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। আমাদের দায়িত্ব এখন এই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং এর সুনামকে অক্ষুণ্ণ রাখা। আমরা যদি আমাদের সেরা প্রচেষ্টা দিই, তবে আমরা নিশ্চয়ই সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।
শেষের কথা:
পরিশেষে, আমি আমার সহপাঠী নবীন বন্ধুদের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা দিতে চাই। আমরা একটি নতুন যাত্রা শুরু করছি, যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ আমাদের অপেক্ষায় রয়েছে। এই যাত্রায় আমরা একে অপরের পাশে থেকে সহযোগিতা করবো, পরিশ্রম করবো এবং আমাদের সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবো।
এই মঞ্চ থেকে আমরা আজ একটি অঙ্গীকার করতে পারি—আমরা আমাদের সেরা প্রচেষ্টা দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলবো, এই প্রতিষ্ঠানের মান বৃদ্ধি করবো, এবং আমাদের পরিবারের, সমাজের এবং দেশের জন্য গর্বের কারণ হবো।
আমি অধ্যক্ষ মহোদয়, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং সিনিয়র ভাই-বোনদের প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। দোয়া করবেন, যেন আমরা আমাদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চটা অর্জন করতে পারি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতা লাভ করতে সক্ষম হই।
ধন্যবাদ।
এই বক্তব্যে নবীন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের নতুন যাত্রা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, সহশিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্ব এবং সিনিয়রদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার নৈতিক দিক, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস এর নমুনা বক্তব্য বা ভাষণ