কীভাবে অনলাইনে জমি বা বাড়ির নামজারি করবেন?

বাংলাদেশে জমি খারিজ বা নামজারি করার প্রক্রিয়া বর্তমানে অনলাইনে সহজতর করা হয়েছে। জমি খারিজ মানে জমির মালিকানা পরিবর্তন করে নতুন মালিকের নামে নামজারি করা। এই প্রক্রিয়াটি এখন অনলাইনে করা যায়, যা সময় সাশ্রয় করে এবং প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ এবং সহজ করে তোলে। নিচে ধাপে ধাপে অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কী কী কাগজ লাগে?

  • নির্ধারিত আবেদনপত্র
  • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) ফটোকপি
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • জমির দলিলের (রেজিস্ট্রি, মোkabala ইত্যাদি) ফটোকপি
  • খতিয়ানের ফটোকপি
  • ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানের রসিদের ফটোকপি
  • ওয়ারিশান সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • বন্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • মূল্য নির্ধারণ কর্তৃপক্ষের (VDC/DB/RA) কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের challan (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • আইনজীবীর ক্ষেত্রে, আইনজীবীর ভিসিটিং কার্ড ও ক্ষমতাপত্রের ফটোকপি

অতিরিক্ত কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

  • যৌথ মালিকানাধীন জমি খারিজের ক্ষেত্রে, সকল সহমালিকের সম্মতিপত্র
  • দানের মাধ্যমে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, দানপত্র
  • উত্তরাধিকারসূত্রে জমি খারিজের ক্ষেত্রে, উত্তরাধিকার সনদ

Note: ওয়ারিশান (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত) সম্পত্তি নামজারি করতে হলে অবশ্যই সহ-শরীক (অন্যান্য ওয়ারিশ) দের সাথে “বন্টন নামা দলিল” থাকতে হবে। নামজারি আবেদনের তারিখ থেকে পূর্ববর্তী তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন হবে।

ধাপ ১: প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ

প্রথমে, জমির প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন জমির দলিল, পূর্বের খতিয়ান, দাগ নম্বর, মৌজা ইত্যাদি সংগ্রহ করুন। এছাড়া, জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রয়ের চুক্তি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসও সংগ্রহে রাখুন।

ধাপ ২: অনলাইন পোর্টালে প্রবেশ

বাংলাদেশ সরকারের ভূমি সংক্রান্ত অনলাইন পোর্টাল (www.land.gov.bd) এ যান। এই পোর্টাল থেকে আপনি জমি খারিজ সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

ধাপ ৩: নিবন্ধন/লগইন

যদি আপনি প্রথমবার এই পোর্টালে যাচ্ছেন, তাহলে আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ইমেল ঠিকানা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে হবে। যদি আপনি পূর্বে নিবন্ধিত হয়ে থাকেন, তাহলে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

ধাপ ৪: নতুন আবেদন জমা দিন

লগইন করার পর, পোর্টালে “নতুন আবেদন” বা “নামজারি আবেদন” অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনাকে জমির তথ্য প্রদান করতে হবে, যেমন জমির খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, মৌজা ইত্যাদি।

ধাপ ৫: ডকুমেন্ট আপলোড

জমির তথ্য প্রদানের পর, আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে। এই ডকুমেন্টসের মধ্যে জমির দলিল, পূর্বের খতিয়ান, জমি ক্রয়ের চুক্তি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকতে পারে।

ধাপ ৬: আবেদন ফি প্রদান

ডকুমেন্ট আপলোড করার পর, আপনাকে আবেদন ফি প্রদান করতে হবে। পোর্টালে বিভিন্ন পেমেন্ট পদ্ধতি দেওয়া থাকবে, যেমন মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ), অনলাইন ব্যাংকিং, এবং ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড। আপনার সুবিধামতো একটি পদ্ধতি নির্বাচন করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।

ধাপ ৭: আবেদন যাচাই

আপনার আবেদন এবং পেমেন্ট সম্পন্ন হলে, পোর্টালের মাধ্যমে আপনার আবেদন যাচাই করা হবে। এই প্রক্রিয়াটি কিছু সময় নিতে পারে। যাচাই প্রক্রিয়ার সময় আপনাকে নিয়মিত আপনার আবেদন স্ট্যাটাস চেক করতে হবে।

ধাপ ৮: অনুমোদন এবং রশিদ প্রিন্ট

যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, আপনার আবেদন অনুমোদন করা হবে এবং আপনার মোবাইল নম্বর বা ইমেল ঠিকানায় একটি নিশ্চিতকরণ বার্তা পাঠানো হবে। পোর্টাল থেকে অনুমোদিত রশিদটি প্রিন্ট করে আপনার রেকর্ডের জন্য সংরক্ষণ করুন।

ধাপ ৯: অফিস থেকে রশিদ সংগ্রহ

অনলাইনে জমি খারিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, আপনাকে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে রশিদ সংগ্রহ করতে হতে পারে। রশিদটি সংগ্রহ করে আপনার জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন।

উপসংহার

বাংলাদেশে অনলাইনে জমি খারিজ প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং স্বচ্ছ। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আপনি ঝামেলামুক্তভাবে জমি খারিজ করতে পারবেন এবং আপনার জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। অনলাইনে জমি খারিজ প্রক্রিয়া সময় এবং শ্রম সাশ্রয় করে, এবং এটি ব্যবহারকারীদের জন্য একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক পদ্ধতি।

অনলাইনে খাজনা পরিশোধের নিয়ম

2 thoughts on “অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি”
  1. […] অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি অনলাইনে খাজনা পরিশোধের নিয়ম অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন পদ্ধতি কাশ্মীর পরিস্থিতি: ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা, এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনা কোটা আন্দোলনের পরিণতি কী হতে পারে? […]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।