২০২৪ সালে ঘরে বসেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উন্নতির ফলে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া আরও সহজ হয়ে উঠেছে। এখন ঘরে বসেই কম সময়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব, যা ট্যাক্সদাতাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক। এই গাইডটিতে ২০২৪ সালে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র, এবং অন্যান্য নির্দেশিকা তুলে ধরা হয়েছে।
আয়কর রিটার্ন কী?
আয়কর রিটার্ন হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের হিসাব ও সেই আয়ের উপর ধার্যকৃত করের বিবরণ। করদাতা তার আয়, খরচ, করযোগ্য আয়, কর ছাড়, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ এই রিটার্ন ফাইল করেন।
নতুন পদ্ধতির সুবিধাসমূহ
- পদ্ধতিগত পার্থক্য: ২০২৩ সালের তুলনায় এবছর বেশ কিছু নতুন আপডেট এসেছে, যেমন সিস্টেমের আপগ্রেড এবং ব্যবহারকারীর জন্য আরো সুবিধাজনক ইন্টারফেস।
- সহজতার দিক: এবছর নতুনভাবে কিছু স্বয়ংক্রিয় ফর্ম পূরণ সুবিধা, সহায়ক নির্দেশনা ও ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি যোগ করা হয়েছে।
টিআইএন (ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) কীভাবে তৈরি করবেন
টিআইএন (TIN) প্রাপ্তির জন্য ধাপসমূহ:
১. কর বিভাগীয় ওয়েবসাইট (https://www.incometax.gov.bd) -এ গিয়ে “নতুন টিআইএন রেজিস্ট্রেশন” অপশনে ক্লিক করুন।
২. আপনার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
৩. ফর্ম পূরণ করার পর রিভিউ করুন এবং সাবমিট করুন।
৪. একটি টিআইএন নম্বর ইস্যু করা হবে যা আপনার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে।
অনলাইনে কীভাবে নিবন্ধন করবেন
অনলাইন রিটার্ন (E-Return) দাখিল প্রক্রিয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন ট্যাক্সপেয়ার ইনডেক্স নাম্বার বা টিআইএন এবং ‘বায়োমেট্রিক ভেরিফাইড’ মোবাইল নম্বর।
১. ওয়েবসাইটে টিআইএন নম্বর এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন।
২. যদি এটি প্রথমবার হয়, তাহলে নতুন একাউন্ট তৈরি করে প্রোফাইল আপডেট করুন।
৩. প্রোফাইলে আপনার সম্পূর্ণ ঠিকানা, ব্যবসায়িক বা পেশাগত তথ্য এবং আয়ের উৎস যুক্ত করুন।
৪. প্রোফাইল আপডেট করার পরে এটি সংরক্ষণ করুন, যা আপনার ভবিষ্যতের ট্যাক্স জমা প্রক্রিয়ার জন্য কাজে আসবে।
আয়কর রিটার্ন বা ই-রিটার্ন জমা দেওয়ার ধাপসমূহ (স্টেপ বাই স্টেপ)
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম ২০২৪-২০২৫
১. রিটার্ন জমা:
– প্রথমে ওয়েবসাইটে লগইন করুন এবং “আয়কর রিটার্ন” মেনুতে যান।
– কর বছর নির্বাচন করুন (যেমন, ২০২৩-২৪) এবং রিটার্ন ফর্ম পূরণ করতে শুরু করুন।
২. রিটার্ন ফরম পূরণ করার প্রক্রিয়া:
– ফরমের নির্দিষ্ট অংশে আপনার আয় এবং ব্যয়ের তথ্য দিন।
– ব্যবসায়িক আয়, চাকরির আয়, ফ্রিল্যান্সিং আয় ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
– সম্পদ এবং দায়ের বিবরণ দিন।
৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
– করদাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কপি।
– আয় ও ব্যয়ের প্রমাণপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্যালারি স্লিপ, ব্যালেন্স শিট)।
– অতিরিক্ত কর ছাড়ের জন্য মেডিকেল রশিদ বা অন্যান্য কাগজপত্র।
টাকা জমা দেওয়ার পদ্ধতিসমূহ
১. পেমেন্ট অপশন:
– কর পরিশোধ করার জন্য ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট), অথবা ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করুন।
– ওয়েবসাইটের “পেমেন্ট অপশন” থেকে পেমেন্ট মেথড নির্বাচন করে নির্দেশিকা অনুসরণ করুন।
২. পেমেন্ট কনফার্মেশন:
– পেমেন্ট সম্পন্ন হলে একটি কনফার্মেশন রসিদ পেয়ে যাবেন। রসিদটি ডাউনলোড করে রাখুন এবং প্রয়োজনে প্রিন্ট করুন।
আয়কর জমাদেয়ার রশিদ / প্রমাণপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া
- রিটার্ন জমা হওয়ার পর ওয়েবসাইট থেকে রসিদ বা প্রমাণপত্র ডাউনলোড করুন।
- রশিদটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করুন, কারণ এটি আপনার ট্যাক্স পেমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. টিআইএন কি এবং এটি কেন প্রয়োজন?
– টিআইএন একটি স্বতন্ত্র নম্বর যা করদাতাদের সনাক্ত করে। এটি আয়কর জমা দেওয়ার জন্য আবশ্যক।
২. অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার খরচ কত?
– সাধারণত কর জমা দিতে কোনো অতিরিক্ত খরচ নেই। তবে পেমেন্ট গেটওয়ে চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
৩. রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ কত?
– প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাধারণত আয়কর জমা দেওয়া যায়, তবে শেষ তারিখ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর।
৪. কোনো ভুল হলে কিভাবে সংশোধন করা যায়?
– লগইন করে সংশ্লিষ্ট রিটার্ন ফর্মে গিয়ে “সংশোধন” অপশন ব্যবহার করুন।
৫. অনলাইনে জমা দিলে কি কোনো অফিসে যেতে হবে?
– সাধারণত না, তবে কোনো তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হলে হয়ত অফিসে যেতে হতে পারে।
৬. প্রমাণপত্র হারিয়ে গেলে কী করবেন?
– লগইন করে আবার রসিদ ডাউনলোড করতে পারেন।
৭. নতুন রেজিস্ট্রেশনে কোন কোন ডকুমেন্ট লাগে?
– জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর এবং প্রাথমিক আয় তথ্য।
৮. রিটার্ন জমার সময় বিভিন্ন আয়ের উৎস কীভাবে দেখাবেন?
– রিটার্ন ফর্মের নির্দিষ্ট অংশে আলাদা আলাদা করে আয়ের উৎসের বিবরণ দিন।
৯. কীভাবে জানবেন আপনার রিটার্ন জমা হয়েছে?
– জমা সম্পন্ন হলে ওয়েবসাইটে একটি কনফার্মেশন পেজ দেখানো হবে।
১০. অনলাইনে জমা দিলে কি রিটার্ন দ্রুত প্রসেস হবে?
– হ্যাঁ, অনলাইনে জমা দিলে প্রক্রিয়া সাধারণত দ্রুত হয়।
১১. কোনো অভিযোগ থাকলে কিভাবে জানাবেন?
– ওয়েবসাইটের “যোগাযোগ” বা “সহায়তা” বিভাগে গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন।
১২. অনলাইনে পেমেন্ট না হলে কিভাবে সমাধান করবেন?
– অন্য পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করুন বা কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করুন।
এই ব্লগটি যেকোনো বাংলাদেশি ট্যাক্সদাতার জন্য অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ গাইড হিসেবে কাজ করবে। আশা করি, এই তথ্যগুলো সবার জন্য সহায়ক হবে।