প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিন। আমি ময়নুল ইসলাম শাহ্‌, আজ আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব আমাদের জাতীয় জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়—২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস। এটি শুধু একটি দিন নয়; এটি আমাদের আত্মমর্যাদা, ত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতীক। এই দিনে আমরা স্মরণ করি সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আমাদের স্বাধীনতার জন্য। নতুন প্রজন্মের কাছে এই দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরা, দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত করা এবং দেশ গড়ার আহ্বান জানানোই আমার আজকের উদ্দেশ্য।


সম্ভাষণ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
সুপ্রিয় সভাপতি, মাননীয় অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত শিক্ষকগণ, এবং প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ,
আসসালামু আলাইকুম/আদাব।

আজকের এই মহিমান্বিত দিনে আপনাদের সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ২৬শে মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এটি এমন এক দিন, যেদিন আমরা স্বাধীনতার পথে প্রথম পদক্ষেপ রেখেছিলাম। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার এই দিনটি আজ আমাদের সামনে এক নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।


মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রথমেই আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। তারা যুদ্ধ করেছিলেন কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়, বরং এই দেশ, এই মাটি, এবং এই জনগণের জন্য। তাদের ত্যাগের কারণেই আজ আমরা স্বাধীন। আমরা তাদের কাছে চিরঋণী। একইসঙ্গে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সমস্ত পরিবারকে, যাঁরা তাদের প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা সহ্য করে জাতির জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন।


দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

প্রিয় শ্রোতাগণ, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ছিল এক কালরাত্রি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নৃশংসভাবে এই দেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, আমাদের উপর চেপে বসার চেষ্টায় মেতে ওঠে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল, এই জাতি সংগ্রাম করতে জানে।

২৬শে মার্চ ভোরে, এই দেশের মানুষ তাদের সর্বস্ব দিয়ে মুক্তির শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধ ছিল রক্ত, ত্যাগ আর বীরত্বের এক অনন্য অধ্যায়। আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, দুই লক্ষাধিক নারী তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন, এবং অগণিত মানুষ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু সেই আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয়।


স্বাধীনতা দিবস নিয়ে ৫টি নতুন কবিতা


এই দিবসের গুরুত্ব

২৬শে মার্চ আমাদের কাছে শুধু একটি তারিখ নয়; এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ভিত্তি। এই দিন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে স্বাধীনতা কোনো সহজে অর্জিত সম্পদ নয়। এটি আসে ত্যাগের মাধ্যমে, আসে অগণিত মানুষের রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে।

আমাদের এই স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি পতাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আমাদের গর্ব, আমাদের অধিকার, এবং আমাদের দায়িত্বের প্রতীক। এই দিনটি আমাদের শিখিয়ে যায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে।


নতুন প্রজন্মের কর্তব্য

প্রিয় তরুণ প্রজন্ম,
আপনারাই এই দেশের ভবিষ্যৎ। এই মহান দিবসটি আপনাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতা শুধু অর্জনের বিষয় নয়, এটি রক্ষা করার বিষয়। স্বাধীনতা ধরে রাখার জন্য আপনাদের সততা, দক্ষতা এবং দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

আজকের দিনে আমরা শপথ নিতে পারি যে আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব এবং আমাদের সব কাজে দেশের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেব। ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গল্পগুলো জানাতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং সততার মাধ্যমে আমাদের দেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।


দেশ গড়ার আহ্বান

আজ আমাদের প্রয়োজন একটি উন্নত, শক্তিশালী, এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ তখনই পূর্ণ হবে, যখন আমাদের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ও সুযোগ পাবে। আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, এবং কুসংস্কারের শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমাদের সবাইকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সমাজের প্রত্যেক স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি বজায় রাখতে হবে।


ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা

শ্রোতাগণ, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করি, তবে আমাদের দেশ অবশ্যই আরও এগিয়ে যাবে। ছোট ছোট ভালো কাজের মধ্য দিয়েও আমরা দেশের জন্য বড় অবদান রাখতে পারি।

একজন ছাত্র হলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিন, একজন পেশাজীবী হলে সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ হয়ে কাজ করুন। অন্যের প্রতি সদয় হোন এবং সর্বদা মনে রাখুন, আপনার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপই দেশকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।


শুভকামনা

আমি আজকের এই মহান দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাই শুভকামনা। আমাদের এই স্বাধীনতা দিবস যেন আমাদের মধ্যে একতা, দেশপ্রেম, এবং সততার সুর তৈরি করে।


ধন্যবাদ জ্ঞাপন

পরিশেষে, আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আপনারা মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনেছেন, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি, আমরা সবাই মিলে এই দেশকে আরও সুন্দর এবং সমৃদ্ধ করে তুলব।


সমাপ্তি

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।”
জয় বাংলা।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
ধন্যবাদ।


২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *