আসসালামু আলাইকুম। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম এবং প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য হজ্জ ফরজ। অনেকে হজের নিয়ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় প্রস্তুতিতে বিভ্রান্ত হন। এই ব্লগে আমি হজের ধাপগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করবো, যাতে আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি সুস্পষ্ট ধারণা পান। আশা করি এই লেখা আপনাদের উপকারে আসবে।


হজ করার নিয়ম ও ফরজ বিধান – বিস্তারিত গাইড

পবিত্র হজ পালনের জন্য তিনটি ফরজ রয়েছে: (১) ইহরাম বাঁধা, (২) আরাফাতে অবস্থান, এবং (৩) তাওয়াফে জিয়ারত। এছাড়া, ওয়াজিব ও সুন্নত আমল রয়েছে যা হজের পূর্ণতা আনে। প্রত্যেক মুসলমানের উচিত হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা।


হজ পালনের ধাপসমূহ: সংক্ষিপ্ত ও ধারাবাহিক বর্ণনা

১. ইহরাম বাঁধা

  • মিকাত সীমান্তে পৌঁছানোর আগে ইহরামের কাপড় পরিধান করতে হয়।
  • দুই রাকাত নামাজ আদায় করে হজের নিয়ত করতে হয়।
  • তালবিয়া পাঠ করতে হয়: لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ…


২. মক্কায় প্রবেশ ও তাওয়াফ করা

  • মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে বাইতুল্লাহ (কাবা শরিফ) তাওয়াফ করতে হয় (৭ বার)।
  • মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়।

৩. সাফা-মারওয়া সাঈ করা

  • সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭ বার হাঁটা (সাঈ) করতে হয়।
  • দোয়া করা এবং জমজম কূপের পানি পান করা হয়।

৪. মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া

  • ৮ জিলহজ তারিখে মিনায় যাওয়া হয়।
  • সেখানে রাতে অবস্থান করা হয় এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়।

৫. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান

  • ৯ জিলহজ সকালে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হওয়া জরুরি।
  • খুতবা শোনা, দোয়া ও ইবাদতে ব্যস্ত থাকা।
  • আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে থাকা ফরজ।

৬. মুজদালিফায় রাতযাপন

  • সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাওয়া হয়।
  • সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করা হয়।
  • শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের জন্য ৭০টি পাথর সংগ্রহ করা হয়।

৭. শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ (রামি)

  • ১০ জিলহজ সকালে জামারায় (শয়তান) প্রথম নিক্ষেপ করা হয় (৭টি পাথর)।

৮. কুরবানির আয়োজন

  • শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের পর পশু কুরবানি করা হয়।

৯. মাথা মুণ্ডানো (হালক) বা চুল ছোট করা (কাসর)

  • পুরুষদের মাথা মুন্ডন করা হয়, মহিলারা চুলের সামান্য অংশ কাটেন।

১০. তাওয়াফে জিয়ারত ও সাঈ

  • মক্কায় ফিরে কাবা শরিফের তাওয়াফ করা হয়।
  • সাফা-মারওয়া সাঈ পুনরায় সম্পন্ন করতে হয়।

১১. মিনায় অবস্থান ও শয়তানকে পুনরায় পাথর নিক্ষেপ

  • ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে জামারা আকাবা, উলা ও ওস্তা নামক তিনটি শয়তানকে প্রতিদিন ৭টি করে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়।

১২. বিদায়ী তাওয়াফ

  • মিনার কাজ শেষ হলে বিদায়ী তাওয়াফ করা হয়।
  • মসজিদুল হারাম ত্যাগ করার আগে এটি করা সুন্নত।

বিশাল মূল্য ছাড়ে ‘হজ পালনের শ্রেষ্ঠ উপায়‘ বই কিনুন।

জনপ্রিয় এই বইটি অর্ডার করতে এখনি ক্লিক করুন


হজ পালন করার জন্য কোথায় যেতে হয়?

হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের মক্কা শহরে যেতে হয়, যেখানে কাবা শরিফ অবস্থিত। হজের নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে মিনায় যাওয়া হয়, তারপর আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয় এবং মুজদালিফায় রাতযাপন করতে হয়। এই স্থানগুলো ছাড়া মদিনা শহরেও অনেকে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যান।

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হয় কেন? জানুন কারণ

শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা (রামি) হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। এটি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে করা হয়, যখন তিনি আল্লাহর নির্দেশে শয়তানকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই প্রতীকী আমলের মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের জীবনের সব ধরনের শয়তানি কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করে।

পুরুষদের হজের নিয়ম ও পোশাক নির্দেশিকা

পুরুষদের জন্য হজের সময় ইহরামের পোশাক পরিধান করা বাধ্যতামূলক, যা সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড়। হজের কার্যক্রম শুরু করার আগে ইহরামের নিয়ত করতে হয় এবং তালবিয়া পড়তে হয়। পুরুষদের মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা (হালক/কাসর) করতে হয়।

মহিলাদের হজের নিয়ম ও করণীয়

মহিলাদের জন্য হজের পোশাক শালীন ও সাধারণ হতে হয়, যা পুরো শরীর আবৃত রাখে তবে মুখ ও হাত খোলা রাখতে হয়। তারা মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারেন না এবং ইহরামের নিয়ত করার পর সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন না। পুরুষদের মতো তাদেরও হালক (চুলের সামান্য অংশ কাটা) করতে হয়।

হজের প্রতিটি ধাপে দোয়া ও মাসায়েল

হজের প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে, যেমন ইহরামের সময় নিয়ত, তাওয়াফের সময় দোয়া, আরাফাতে অবস্থানের দোয়া ইত্যাদি। হজের বিভিন্ন মাসায়েল সম্পর্কে জানা জরুরি, যেমন কী করলে দম (বলি) ওয়াজিব হয় এবং কীভাবে ভুল সংশোধন করা যায়। হজের আমল সহিহভাবে সম্পন্ন করতে এসব জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বই- হজে বায়তুল্লা ও মদিনা জিয়ারতে মাসনুন দোয়া ও জিকির

এক নজরে হজের কার্যক্রম – সংক্ষিপ্ত গাইড

হজের কার্যক্রম কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়: (১) ইহরাম বাঁধা, (২) মক্কায় কাবার তাওয়াফ, (৩) সাফা-মারওয়া সাঈ, (৪) মিনায় যাত্রা, (৫) আরাফাতে অবস্থান, (৬) মুজদালিফায় রাতযাপন, (৭) শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, (৮) কুরবানি, (৯) মাথা মুন্ডানো, (১০) তাওয়াফে জিয়ারত, (১১) মিনায় অবস্থান, এবং (১২) বিদায়ী তাওয়াফ।


প্রত্যেক হজের সকল দরকারি উপকরণ লিস্ট


হজের জন্য প্রয়োজনীয় লাগেজ প্রস্তুতি

পবিত্র হজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে ইহরামের কাপড়, আরামদায়ক জুতা, ছাতা, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম, কুরআন শরিফ, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী। যেহেতু হজের সময় প্রচণ্ড গরম থাকে, তাই হালকা কাপড় ও পানি ধারণক্ষম বোতল নেওয়া উচিত।

হজের মিসওয়াক কিনুন

ফরজ হজ পালনের নিয়মাবলী ও সুন্নত আমল

ফরজ হজ পালনের তিনটি আবশ্যিক কাজ হল (১) ইহরাম বাঁধা, (২) আরাফাতে অবস্থান, এবং (৩) তাওয়াফে জিয়ারত। সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলোর মধ্যে তালবিয়া পাঠ, দোয়া করা, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং নামাজ আদায় করা অন্যতম। সুন্নত আমলগুলো হজের সৌন্দর্য ও পূর্ণতা বৃদ্ধি করে।

হজের পোশাক কেমন হওয়া উচিত? পুরুষ ও মহিলাদের জন্য

পুরুষদের জন্য হজের পোশাক হল সেলাইবিহীন দুটি সাদা কাপড় (ইহরাম)। মহিলাদের পোশাক শালীন এবং ইসলামী নিয়ম মেনে হতে হবে, তবে তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রঙের বাধ্যবাধকতা নেই। মুখ ও হাত খোলা রাখতে হবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

হজে যাওয়ার জায়নামাজ দেখুন

উমরাহ করার নিয়ম ও হজের পার্থক্য

উমরাহ ও হজের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, হজ নির্দিষ্ট সময়ে (জিলহজ মাসে) ফরজ হয়, আর উমরাহ সারাবছর করা যায়। উমরাহতে আরাফাতে অবস্থান ও শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার নিয়ম নেই। উমরাহ মূলত ইহরাম বাঁধা, তাওয়াফ করা, সাঈ করা এবং চুল কাটার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।


পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিমদের অবদান


২০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

  1. হজ কি এবং এটি কখন ফরজ হয়?
    • পবিত্র হজ হল ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ, এটি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য ফরজ।
  2. হজ পালনের জন্য কোন কোন স্থানে যেতে হয়?
    • মক্কা, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা এবং মদিনা (ঐচ্ছিক)।
  3. শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা হয় কেন?
    • এটি ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত অনুসারে আল্লাহর আনুগত্যের প্রকাশ।
  4. পুরুষদের হজের পোশাক কেমন হয়?
    • দুই টুকরো সাদা ইহরামের কাপড়, সেলাইবিহীন।
  5. মহিলাদের হজের পোশাক কেমন হওয়া উচিত?
    • সাধারণ পোশাক, মুখ ও হাত খোলা রাখা আবশ্যক।
  6. হজে কতদিন সময় লাগে?
    • সাধারণত ৫-৬ দিন।
  7. ইহরাম বাঁধার সময় কী দোয়া পড়তে হয়?
    • نويت الحج وأحرمت به لله تعالى (আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজের নিয়ত করলাম)।
  8. হজের জন্য কোন কোন জিনিস প্রয়োজন?
    • ইহরামের কাপড়, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ব্যক্তিগত সামগ্রী ইত্যাদি।
  9. হালক ও কাসর কী?
    • হালক মানে মাথা মুন্ডানো, কাসর মানে চুল ছোট করা।
  10. কোন বয়সের পর হজ ফরজ হয়?
  • প্রাপ্তবয়স্ক, মানসিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম হলে।
  1. হজ ও উমরাহর মধ্যে পার্থক্য কী?
  • হজ নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ, উমরাহ যে কোনো সময় করা যায়।
  1. নারীরা কি একা হজ করতে পারে?
  • না, তাদের সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা বাধ্যতামূলক।
  1. হজের সময় কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
  • হালাল, হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার।
  1. হজে যাওয়ার জন্য কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন?
  • শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি।
  1. বিদায়ী তাওয়াফ করা কি বাধ্যতামূলক?
  • এটি সুন্নত, তবে সম্ভব হলে করা ভালো।
  1. হজের খরচ কত হতে পারে?
  • এটি দেশ ও এজেন্সি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
  1. হজের সময় গুনাহ মাফ হয় কি?
  • হ্যাঁ, হাদিস অনুযায়ী হজ করলে আগের গুনাহ মাফ হয়।
  1. হজের নিয়ত কীভাবে করতে হয়?
  • ইহরাম বাঁধার পর নিয়ত করতে হয়।
  1. হজ বাতিল হওয়ার কারণ কী?
  • নিষিদ্ধ কাজ করা, নিয়ত পরিবর্তন ইত্যাদি।
  1. হজের নিয়ম (PDF) কোথায় পাওয়া যাবে?
  • আমাদের ব্লগ থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।

One thought on “হজ পালনের নিয়ম সংক্ষেপে ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ গাইড; যেভাবে হজ পালন করবেন”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *