Detailed Review of Bangladesh Copyright Act, 2023 By Moynul Islam Shah
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ২০২৩ সালে কপিরাইট আইন সংশোধিত ও আধুনিকীকৃত হয়েছে। নতুন আইনে সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা আরও জোরদার করা হয়েছে এবং ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০২৩ সম্পর্কিত প্রধান বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচনা করব। এটি ২০২৩ সালের ৩৪নং আইন।
কপিরাইট আইনের সংজ্ঞা
কপিরাইট হল একটি আইনগত অধিকার যা সৃষ্টিশীল কাজের কর্তার জন্য সংরক্ষিত। এটি কর্তাকে তার কাজের প্রজনন, বিতরণ, প্রদর্শন, এবং পরিবর্তনের উপর নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ দেয়। কপিরাইট আইন, 2023 হল একটি নতুন আইন যা 2000-এর আগের কপিরাইট আইন বাতিল করে বেশ পরিশীলিত উপায়ে কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে৷ 2023 সালের আইনটি ডেটা সুরক্ষার EU মডেলকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আইনটি ধারা 2(11)(h) এর অধীনে কপিরাইটযোগ্য কাজ হিসাবে ডাটাবেসকে অন্তর্ভুক্ত করে।
কপিরাইট আইনের ইতিহাস
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রচলিত ছিল। ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান পিরিয়ডে কপিরাইট অধ্যাদেশ কার্যকর হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কপিরাইট আইন হিসেবে প্রণীত হয়। ২০২৩ সালের কপিরাইট আইনটি আগের আইনের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ। নতুন আইনে অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামে কর্মের সত্ত্বাধিকারী, ডেটাবেজ, পাবলিক ডোমেইন, মনোগ্রাম, প্রডিউসার, ব্যক্তি, লোকগান, লোকসংস্কৃতি, সম্পাদক, সম্পত্তি অধিকার—এসব কিছুর নতুন সংজ্ঞা সংযোজিত হয়েছে।
২০২৩ সালের কপিরাইট আইনের প্রধান পরিবর্তনসমূহ
২০২৩ সালের কপিরাইট আইনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা আরও জোরদার করেছে এবং ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
- ডিজিটাল কপিরাইট সুরক্ষা: ডিজিটাল যুগে কপিরাইট লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন আইনে ডিজিটাল সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইন্টারনেটে কপিরাইট লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
- কপিরাইট নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ: নতুন আইনে কপিরাইট নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। অনলাইনে কপিরাইট নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা সৃষ্টিকর্তাদের জন্য আরও সহজ ও সুবিধাজনক।
- ন্যায্য ব্যবহার নীতি: ন্যায্য ব্যবহার নীতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে, সমালোচনা, পর্যালোচনা বা গবেষণার জন্য সৃষ্টিশীল কাজের কিছু অংশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
- কপিরাইট লঙ্ঘনের শাস্তি বৃদ্ধি: কপিরাইট লঙ্ঘনের শাস্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন আইনে কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য আরও কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যা অর্থদণ্ড থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
- নৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, রিলেটেড রাইটস, পাবলিক ডমেইন ইত্যাদি বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। আগের আইনে রিলেটেড রাইট্সের (যেমন: সংগীত, নাটক ইত্যাদি) বিষয়টি উপযোগী ছিল না এবং এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে থাকত। এ সমস্যা নিরসনে রিলেটেড রাইটসের বিষয়টি বর্তমানে অনেকটা স্বচ্ছ ও বিস্তৃত করা হয়েছে। নতুন অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। লোকজ্ঞান ও লোক-সংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষা পাবে এ আইনে।
কপিরাইটের মেয়াদ
সাধারণত, কপিরাইটের মেয়াদ সৃষ্টিকর্তার জীবদ্দশা এবং তার মৃত্যুর পর আরও ৬০ বছর পর্যন্ত থাকে। তবে, এটি নির্ভর করে সৃষ্টিশীল কাজের ধরন ও কপিরাইট মালিকানার অবস্থানের উপর।
কপিরাইটের সুরক্ষিত কাজ
বাংলাদেশের কপিরাইট আইন অনুযায়ী, নিম্নলিখিত সৃষ্টিশীল কাজগুলো কপিরাইট সুরক্ষা পায়:
- সাহিত্যিক কাজ (যেমন: বই, প্রবন্ধ)
- সঙ্গীত কাজ (যেমন: গান, সুর)
- নাটকীয় কাজ (যেমন: নাটক, স্ক্রিপ্ট)
- চিত্রকলা, ভাস্কর্য এবং গ্রাফিক্স
- সিনেমাটোগ্রাফিক কাজ (যেমন: চলচ্চিত্র)
- সাউন্ড রেকর্ডিং
- স্থাপত্যশৈলী
কপিরাইট কি ধরনের অপরাধ?
কপিরাইট হল এক ধরনের বৌদ্ধিক সম্পত্তি , আইনের একটি ক্ষেত্র যা ডাকাতি বা চুরিকে কভার করে, শুধুমাত্র বাস্তব সম্পত্তি সম্পর্কিত অপরাধ। সমস্ত কপিরাইট লঙ্ঘনের ফলে বাণিজ্যিক ক্ষতি হয় না, এবং মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট 1985 সালে রায় দেয় যে লঙ্ঘন সহজে চুরির সাথে সমান হয় না।

কপিরাইট আইন কত বছর?
কপিরাইটের মেয়াদ হবে ৬০ বছর।
কপিরাইটের মালিক কে?
সরকারী কর্মের ক্ষেত্রে সাধারণত সরকারই কপিরাইটের মালিক এবং এই মালিকানা কর্মটি প্রকাশিত হওয়ার পর ষাট বছর। অন্য কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলের স্থানীয় কর্র্তৃপক্ষের কর্ম কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মের মালিকানা আর মেয়াদও অনুরূপ। ষষ্ঠ অধ্যায়ে সম্প্রচার ও সম্পাদনের কপিরাইট যৌথভাবে আলোচিত হয়েছে।
কপিরাইট লঙ্ঘন
যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কপিরাইট ধারকের অনুমতি ছাড়া তার সৃষ্টিশীল কাজ ব্যবহার করে, তবে এটি কপিরাইট লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে, যা অর্থদণ্ড থেকে শুরু করে কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।
যদি কোনো ব্যক্তি কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী না হয়ে প্রকাশ, পরিবেশন বা সম্পাদন করেন তাহলে তিনি অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল যুগে, কপিরাইট আইনের চ্যালেঞ্জগুলি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের ফলে কপিরাইট লঙ্ঘন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল কপিরাইট আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করতে কাজ করছে। ২০২৩ সালের কপিরাইট আইন ডিজিটাল সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধারা সংযোজন করেছে।
কপিরাইট নিবন্ধন
বাংলাদেশে কপিরাইট নিবন্ধন করা খুবই সহজ। কপিরাইট অফিসে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ও প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, সৃষ্টিশীল কাজের সৃষ্টিকর্তা একটি কপিরাইট সার্টিফিকেট পান। ২০২৩ সালের কপিরাইট আইন অনলাইনে নিবন্ধনের সুবিধা প্রদান করেছে, যা সৃষ্টিকর্তাদের জন্য আরও সহজ ও সুবিধাজনক।
কপিরাইট আইন সংস্কার
কপিরাইট আইন আধুনিককরণ ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমবর্ধমান। ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে কপিরাইট আইনের আরও পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য নিয়মিত কপিরাইট আইন পর্যালোচনা ও আপডেট করা উচিত।
কপিরাইট সম্পর্কিত জনসচেতনতা
কপিরাইট আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই কপিরাইট আইনের গুরুত্ব এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে অবগত নন। তাই, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির উদ্যোগে কপিরাইট সম্পর্কিত জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত।
উপসংহার
বাংলাদেশের কপিরাইট আইন, ২০২৩ সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদান করে। এটি সৃষ্টিকর্তাদের তাদের কাজের উপর নির্দিষ্ট অধিকার প্রদান করে এবং কপিরাইট লঙ্ঘন রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে কপিরাইট আইন আধুনিককরণ ও সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। সৃষ্টিশীল কাজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং কপিরাইট আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
Feasibility of Data Protection under the Copyright Act 2023: A New Approach
মূল আইন দেখুন-
কপিরাইট আইন, ২০২৩ ( ২০২৩ সনের ৩৪ নং আইন )